উল্লাপাড়াসিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়া আসনে প্রার্থী-৩, ফুরফুরা মেজাজে নির্বাচনী প্রচারে নৌকার মাঝি শফি

ইসমাইল হোসেন: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৩ উল্লাপাড়া আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ০৩ জন। এরা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে শফিকুল ইসলাম শফি, জাসদ মনোনীত নৌকা প্রতীকে মোস্তফা কামাল ও জাতীয় পার্টির হিলটন প্রামাণিক।

নির্বাচনে দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ফুরফুরা মেজাজে দিনরাত প্রচার করছেন সাবেক এমপি, দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের শফিকুল ইসলাম শফি। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনজন। কিন্ত বাস্তবতা প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্রোতধারা থেকে বেশ দূরে  জাসদ ও জাপার দুজন।

জেলার সর্ববৃহৎ সংসদীয় আসন উল্লাপাড়া। ১৪টি ইউনিয়ন ও ০১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকায় ভোটার সংখ্যা  ৪ লাখ ৪৩ হাজারের ওপরে ।

অতীতে গত ৫২ বছরের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত ১১টি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছে  ০৫ বার,  জাসদ  ০১ বার, সম্মিলিত বিেেরাধী দল-০১, বিএনপি-০৩ ও জাতীয় পার্টি-০১ বার।

১৯৭৩ সালে এ আসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রয়াত অ্যাড. দবিরউদ্দিন আহমেদ জয়ী হন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদ নেতা, বীরমুক্তিযোদ্ধা পলাশডাঙ্গা যুব শিবির এর পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জ্জা। ১৯৯৬ সালের জুনে অনুিষ্ঠত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী  লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন।

১৯৮৬ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতিকের আব্দুল লতিফ (চাকশার লতিফ),  ১৯৮৮ সালে জাসদ রব  (স.বি.) এর আব্দুল হামিদ তালুকদার, ১৯৯১ সালে বিএনপির ধানের শীষের আকবর আলী, ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা শামছুল আলম, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আকবর আলী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে শফিকুল ইসলাম এআসনটিতে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনেন। পরে  ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের তানভীর ইমাম দুবার এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

উল্লাপাড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ (ইনু) দলের রাজনৈতিক কাঠামো আছে ও রাজনৈতিক তৎপরতা দেখা যায়।  জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ এ আসনটি তাদের একটি ভালো অবস্থানের প্রমান দিয়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে । ২০২৪ সালের নির্বাচনে অন্যতম বিরোধী  রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ জামায়াতে ইসলাম, সিপিবি নির্বাচন বর্জন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী, জাতীয় পার্টি, জাসদ এর মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করে। এবং বিএনপি-জামায়াত  সিপিবির কোন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র উত্তেলন করা থেকে বিরত থাকে। 

গত ৪ ডিসেম্বর দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইশেষে ১৮  ডিসেম্বর বৈধ ৩ প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ দেয় জেলা রিটানিং অফিসার। 

এপর্যন্ত ৩ জন বৈধ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী  শফিকুল ইসলাম সাবেক এমপি। সাবেক এই এমপি, দুবারের  একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি  ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম এর নির্বাচনী পোষ্টার, ব্যানার উপজেলার সদর ও তৃণমুলের সড়ক, জনপদ, অলিগলিতে ছাপিয়ে গেছে। নৌকার প্রার্থী ফুরফুরা মেজাজে গনসংযোগ করছেন, পথসভা করছেন। যাচ্ছেন তৃণমুলে ভোটারদের কাছে। সেই সঙ্গে চলছে প্রচার মিছিল।

নির্বাচনে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক জনপ্রিয় জাসদ ছাত্রলীগের নেতা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মোস্তফা কামাল। তিনি শিক্ষাজীবন শেষে সরকারি চাকরিতে যোগদেন। দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি শেষে কবছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে। পরে মোস্তফা কামাল পবিত্র হজ সম্পন্ন করে এলাকায় বসবাস ও রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সমাজ বিপ্লবের ডাক দিয়ে জন্ম নেয়া জাসদের একাধিক বিভক্তি, দলের এলাকার জনপ্রিয় নেতা প্রয়াত লতিফ মির্জ্জার দলত্যাগ করে আওয়ামী যোগদান, ইত্যকার নানা সমীকরণে অনেকটাই সাংগঠনিকভাবে দুর্বল স্থানীয় জাসদ। এর সাথে যোগ হয়েছে মোস্তফা কামালের দীর্ঘদিন রাজনীতিতে অনুপস্থিতি। সব কিছু মিলিয়ে মশাল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা কামাল বকুল ভোট যুদ্ধে নৌকার সঙ্গে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলবার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী প্রচারও চলছে । তবে অনেকটাই ধীমে তালে প্রচারণায় জাসদ এবারের নির্বাচনী প্রতিযোগীতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না বলে অনেকের অভিমত।

অন্য আরেক প্রার্থী জাতীয় পার্টির তাঁতী দলের নেতা হিলটন প্রামাণিক। তার দল জাতীয় পাটি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় ৮৬ সালে একবার বিজয়ী হয় আসনে। ৯০ সালে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলের বিভক্তি, রাজনৈতিক ভুমিকায় নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া জাতীয় পার্টি এ এলাকায় অনেকটাই দুর্বল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর  পরবর্তীতে ্েকান জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টি জয়ী হতে পারেনি। এলাকায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতাও জনমনে প্রভাব ফেলার মতো কিছু নয়। দলের মনোনীত প্রার্থী নৌকার বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে পারেনি কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী তাতী পার্টির হিল্টন প্রামাণিক এর প্রচার চলছে। গণসংযোগ করছেন প্রার্থী। কিন্ত সব কিছুই হচ্ছে অনেকটা ধীর গতিতে।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাসদ  ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে নৗকার প্রতীকের সঙ্গে কার্যত কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এবারের  নির্বাচনে নৌকার মনোনীত শফিকুল ইসলাম শফি’র  বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়া নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আছে কিন্ত কার্যত কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় অনেকে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি-জামায়াত ও সিপিবির কোন প্রার্থী।  এমনতর নির্বাচনী পরিবেশে  নৌকার প্রার্থী ফুরফুরা মেজাজে কাজ করছেন দিনরাত।  সবকিছু মিলিয়ে অন্য কোন দুর্বিপাক না ঘটলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে উল্লাপাড়ায় নৌকা প্রার্থীর বিজয়ী ঘোষণা সময়ের অপেক্ষামাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button