সদরসিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের কৃতীজন দেশের প্রথম চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরী আর নেই

ইসমাইল হোসেন: এদেশের প্রথম প্রজন্মের চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক সিরাজগঞ্জের কৃতীজন আফজাল চৌধুরী আর নেই। (ইন্না ইল্লা…..রাজিউন)। গত ৩১ আগষ্ট, বৃহস্পতিবার, ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়- স্বজন, ভক্ত ও অনুরাগী রেখে গেছেন।

গত শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, বাদ জুমা ঢাকার বারিধারার বায়তুল আতীক জামে মসজিদে মরহুমের প্রথম নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গতকাল  ৩ সেপ্টেম্বর রোববার বাদ যোহর সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের মালশাপাড়া মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা শেষে তাকে মালশাপাড়া পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বরণ্য চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক  আফজাল চৌধুরী ১৯৩১ সালের ৩১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীকোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল ওহাব চৌধুরী, বড় ভাই সিরাজগঞ্জের প্রখ্যাত ওষুধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চৌধুরী মেডিক্যাল ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী প্রয়াত আবুল হোসেন চৌধুরী।

সিরাজগঞ্জের এই কৃতীজন আফজাল চৌধুরীর শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত করেছেন তার প্রিয় শহর সিরাজগঞ্জ শহরে। ছোটবেলা থেকেই তার ফটোগ্রাফীর ওপর ছিলো প্রচন্ড আগ্রহ। চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছে নিয়েই তিনি ১৯৫০ সালে বোম্বে যান। সেখানে বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক ভাই জাল মিস্ত্রি ও ফলি মিস্ত্রি’র কাছে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ শেখেন। এরপর লাহোর ও করাচিতে কাজ করেন। ১৯৬০ সালে জহির রায়হানের চিঠি পেয়ে ঢাকায় আসেন তার ‘কাচের দেয়াল’ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ করেন। এটিই ঢাকায় তার প্রথম চিত্রায়িত চলচ্চিত্র। এরপর ঢাকায় বহু ছবির চিত্রগ্রহণ করেন জহির রায়হান ও অন্যান্য পরিচালকদের চলচ্চিত্রে।

তৎকালীন পাকিস্তানের ঢাকা ও লাহের অসংখ্য ছবির তিনি ছিলেন একজন চিত্রগ্রাহক। পাকিস্তানের সবচেয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ‘আয়না’ ইত্যাদি ছাড়াও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বহু ছবি চিত্রায়িত হয়েছে আফজার চৌধুরী হাত দিয়ে।

তিনি ছিলেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে জহির রায়হান নির্মিত প্রথম রাজনৈতিক ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’ এর  সফল চিত্রগ্রাহক।

পাকিস্তানের প্রথম আংশিক রঙ্গীন ‘গুলে বাঁকালি’ (১৯৬১), প্রথম এক শটের গানের ‘ওয়াফা কি ইয়াদা’ , বাংলাদেশের প্রথম ‘লো-কি’ সিনেমাটোগ্রাফি ‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩), প্রথম সম্পুর্ণ রঙ্গীন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪), প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ (১৯৬৫), প্রথম ‘ট্রিপল রোল’ –এর চলচ্চিত্র ‘জ্বলতে সুরুজ কে নিচে, ১৯৭০/উজ্জ্বল সূর্যের নীচে, ১৯৭৭

বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুম আফজাল চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এছাড়া, আফজাল চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র চিত্রগ্রাহক সংস্থা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) ও অভিনেত্রী ঢাকা ও লাহোর এর চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শবনম।

দৈনিক সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও এনডিপি’র নির্বাহী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন খান, নির্বাহী সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক পাঠাগার এর সভাপতি ইসমাইল হোসেন তার মৃত্যু গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button