সদরসিরাজগঞ্জ

চলে গেলেন অগ্রজ সাংবাদিক আমিনুল চৌধুরী

ইসমাইল হোসেন: সিরাজগঞ্জের অতি পরিচিত মুখ। অগ্রজ সাংবাদিক। প্রাক্তন ছাত্রনেতা। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী গত ০৪ ফেব্রুয়ারি, রোববার সকাল ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে বয়সজনিত অসুস্থতায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন।

গতকাল সন্ধ্যায় তার নামাজে জানাযা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের মালশাপাড়া পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি ০১ মেয়ে ও ১ পুত্র সন্তান, আত্মীয় স্বজন, অসংখ্য গুণগ্রাহী, অনুজ সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা ও রাজনৈতিক সহকর্মী রেখে গেছেন।

এর আগে জাতীয় পতাকা দিয়ে তার মরদেহ আচ্ছাদন করে দেয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদান করা হয়। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তার মরদেহে পুষ্পস্তব দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে তার নামাযে যানাজায় বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. কে. এম. হোসেন আলী হাসান, পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী ইসহাক আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল ইসলাম সফি, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।

এসময় মরহুমের পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিপুল সংখ্যক সাধারন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকতা জীবনে তিনি সংবাদ তৈরি করেছেন, সাংবাদিক গড়েছেন। পেশার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক সংগঠক। সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা ও মজুরি বৃদ্ধি লক্ষ্যে আমিনুর ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মহকুমা, জেলা ও কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সমিতি সিরাজগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব করেন। সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাক্তন সভাপতি,  প্রযাত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী আমৃত্যু সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাব এর আজীবন সদস্য ছিলেন।

১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক সৈনিক পত্রিকার সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতার শুরু করেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর সাংবাদিকতা পেশা ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। ২০১৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান হিসেবে পেশাগত জীবনের সমাপ্তি টানেন তিনি।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকতায় একাধিক পদকে ভুষিত হন। ১৯৮২ সালে  পল্লি সমাজ পদক, প্রেস ইনন্সিটিউট ও এমিক এর উদ্যোগে এশিয়া রিপোর্টার্স সম্মেলনে শ্রেষ্ঠ রিপোর্টার পদকপ্রাপ্ত হন। ২০০২ সালে মানবাধিকার পদক, ২০০১ সালে তাকে জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি গুণিজন পদক প্রদান করেন। এছাড়াও, সিরাজগঞ্জের সাংবাদিকদের পুনর্মিলনী উৎসবে ও দৈনিক যুগের কথা পত্রিকার একযুগের পুর্তি উৎসবে তাকে সম্মাননা প্রদান  করা হয়। ছাত্র জীবন প্রয়াত আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ সিরাজগঞ্জ মহকুমা কমি্িটর সভাপতি। তিনি ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। বাকশাল সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

২০০০ সালে  তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হয়ে ব্রাসেলসে এলডিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সাংবাদিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ছাত্রনেতা হিসেবে এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।

প্রয়াত আমিনুল চৌধুরী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বহুকা গ্রামে ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- আজিজল ইসলাম চৌধুরী। মাতা-  আফতাব মহল ।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু গ্রামের প্রাইমারি বিদ্যালয় বাহুকা প্রাইমারি স্কুলে। পরে তিনি গান্ধাইল হাই স্কুল, বাগবাটী হাই স্কুল, লালমনিরহাট হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৬০ সালে সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। সিরাজগঞ্জ কলেজ থেকে স্লাতক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তার সহধর্মীনি ছিলেন প্রখ্যাত লোহানী পরিবারের প্রয়াত সাফিনা লোহানী। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত  তিনি শহরের নিজ বাসায় বসবাস করতেন। তার মৃত্যুতে দৈনিক সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক পাঠাগার এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইসমাইল হোসেন গভীর শোক ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button