প্রতি বছরের মতো এবারও চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কাঁটাবাড়ি ও গুমানী নদীসহ বিভিন্ন বিলে শুরু হয়েছে বাউত উৎসব। এ উৎসবের মাধ্যমে বিল এলাকা জুড়ে পলো, ঝুঁতি, ফাঁসি জাল, মই জাল, তেইরী, টেঁটাসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে ধরা হচ্ছে নানা প্রজাতীর মাছ।
স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে শিঙ্গা ফুকানোর মাধ্যমে এলাকার উৎসুক মাছ ধরার লোকজন জড়ো করে নদীতে, খালে ও বিলাঞ্চলে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে নানা প্রজাতীর মাছ ধরাকে চলনবিল এলাকায় এই উৎসবকে বলা হয় বাউত উৎসব।
আর স্থানীয়রা সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও বুধবার নির্দিষ্ট একটি বিলে বাউত নামার দিন ক্ষণ ঠিক করে থাকেন। তাদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তি উপজেলার লোকজনও ভোর হতেই নানা যানবাহনে মাছধরার হরেক রকম উপকরণ নিয়ে হাজির হন বিলে। সৌখিন মৎস্য শিকারি হাতে পলো ও নানা রকমের জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। আর এ উৎসবে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত মাছ ধরার এই উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। এমনটাই জানালেন, উপজেলার নাদোসৈয়দপুর গ্রামের সৌখিন মৎস্য শিকারী মো. জামাল উদ্দিন সরকার (৫৫)।
দিন ক্ষণ ঠিক রেখে বুধবার সকালে তাড়াশ উপজেলার কাঁটাবাড়ি বিলে নামে ওই বাউত। আর ওই বাউতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর উপজেলার শত শত মানুষ নেমেছিল বিলে মাছ ধরতে।
বাউত উৎসবে আসা বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারি আমের আলী জানান, এই মাছ ধরা উৎসবে বোয়াল, শোল, রুই, কাতলা, আইড়, মুগেল ছাড়াও হরেক রকম দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রতি বছরই চলনবিল অঞ্চলে নদী ও বিলে আগ্রহায়ন ও পৌষ মাসে ওই বাউত নামে। চলে ২০ থেকে ২৫ দিন।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, প্রতি বছরই বিল এলাকায় উন্মুক্ত জলাশয়ে স্থানীয় ও দুর-দুরান্ত থেকে আসা লোকজন ওই বাউত উৎসবে মাছ ধরে থাকেন।
এদিকে বাউত উৎসবের কারণে বিলের জীব বৈচিত্র চরমভাবে বিনষ্ট হচ্ছে বলে পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করে আসছেন। চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান জানান, বাউত উৎসব চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। এতে বিলে জীববৈচিত্র বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে গণসচেতনতা বাড়ানো দরকার।