এনডিপি প্রতিনিধি: পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আওতাধীন জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এর দুটি প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পিকেএসএফ এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক-১, মো. ফজলুল কাদের।
গতকাল রোববার ২২ জানুয়ারি, তিনি এনডিপি বাস্তবায়িত সাস্টেনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)-ডেইরী এর আওতাধীন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের গরুর বাথান, গ্রামীন দুদ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্র ও চিলিং সেন্টার পরিদর্শন করেন এবং বেলকুচি উপজেলায় সাস্টেনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট এসইপি-তাঁত প্রকল্পের উদ্ভাবিত মিনি ইটিপি প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, এনডিপির নির্বাহী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন খান, পরিচালক (পিআরএম) এবিএম সাজ্জাদ হোসেন, পরিচালক (ঋণ সহায়তা কর্মসূচি) মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক (ঋণ সহায়তা কর্মসূচি) মো. সাইফুল ইসলামসহ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ।
পিকেএসএফ এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক-১, মো. ফজলুল কাদের উদ্ভাবিত মিনি ইটিপি প্ল্যান্ট-কে প্রকল্পের অন্যতম অর্জন বলে তিনি আখ্যায়িত করেন। একইসাথে পরিদর্শনকালে তিনি প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের সমস্যাসমূহ অতিদ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের বাসিন্দা হাজী মো.আনোয়ার হোসেন মোল্লা প্রথম এনডিপি’র কমন সার্ভিস লোনের আওতায় এই মিনি ইটিপি স্থাপন করে।
এসময় মিনি টাইপ ইটিপি স্থাপনকারী হোসেন মোল্লা বলেন, আমার দীর্ঘ দিনের ইচ্ছা ছিল ইটিপি তৈরি করব কিন্তু অর্থ ও প্রযুক্তির আভাবে তা করতে পারিনি। এনডিপি-এসইপি (তাঁত) প্রকল্পের কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমি অল্প খরচে মিনি-ইটিপি তৈরি করতে পেরেছি। তিনি জানান, মিনি ইটিপি একটি অভিনব প্রযুক্তি এবং তুলানামূলক খরচ কম। মিনি ইটিপি বর্জ্য পানি পরিশোধন করে প্রকৃতিতে ছাড়তে সহায়তা করবে। পানির বিভিন্ন উপাদান যেমন- দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, বিভিন্ন এসিড পরিবেশ অধিদপ্তরের গ্রহণ যোগ্য মাত্রায় রাখতে মিনি ইটিপি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জ তাতকুঞ্জ নামে খ্যাত মানে তাত শিল্প। কিন্তু এই শিল্পের আমাদের জন্য আশিবার্দ হলেও কেমিক্যাল ডাইং হলো অভিশাপ। কেমিক্যাল ডাইং এর ক্ষতিকর রং মাটি এবং ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করে। যার ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। দূষিত এই পানি পান করার ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হচ্ছে অসুস্থ্য বাড়ছে জন্মগত প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা।
এনডিপি-এসইপি তাঁত প্রকল্পের এই মিনি-ইটিপি পরিশোধিত পানি আশে-পাশের জলাশয়ে জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদের জন্য কোন ক্ষতির কারণ না হয়ে বরং একটি শক্তিশালী বাস্তুসংস্থান সৃষ্টি করে। ভূ-গর্ভস্থ পানির মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ায় বিদেশের বাজারে সিরাজগঞ্জের তাঁতের পণ্য রফতানির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এক কথায় মিনি ইটিপি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
উল্লেখ্য রাসায়নিক রং এর পানি ভূগর্ভে গিয়ে যেন ক্ষতি করতে না পারে তারজন্য আবিস্কার হয়েছে “ইটিপি কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের সিরাজগঞ্জের তাত মালিকগন তা স্থাপনে অপারগতা এবং অদক্ষতা দেখিয়ে পার পেয়ে যেত। ব্যবসাগুচ্ছ-ভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোগে পরিবেশের স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোগের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘‘সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)” বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থা ‘‘ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম( এনডিপি)” ‘‘তাঁত” অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ ও বেলকুচি উপজেলায় ‘‘সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত উদ্যোগে পরিবেশগত সমস্যাসমূহ বিবেচনায় রেখে গুণগত মানসম্পন্ন ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালী পোষাকের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প”- শীর্ষক একটি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এনডিপি; স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সহায়তায় কারখানা ও তার চারপাশের পরিবেশ উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন ও তা প্রিমিয়াম মার্কেটে বিক্রির মাধ্যমে উদ্যোক্তার উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প হতে সিরাজগঞ্জের তাঁত অধ্যুষিত এলাকার ডাইং উদ্যোক্তার মাঝে মিনি ইটিপি’র ধারণা প্রদান করা হয়।
আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দূষণ মুক্ত সমাজ গড়তে মিনি ইটিপি স্থাপনে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাগণকে এগিয়ে আসতে হবে।