বিজয় আহমেদ সাগর: স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা। মেলায় দইসহ নানা রসনাবিলাসী খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, কদমাসহ খাবার বেচাকেনা হচ্ছে। সকাল থেকে মেলায় ভীড় করছেন ক্রেতারা। সিরাজগঞ্জের ঘোষরা তৈরি করেন হরেক রকমের দই-মিষ্টি। এখানকার তৈরি দই আকর্ষণীয় এবং খেতেও সুস্বাদু।
শ্রীপঞ্চমী তিথি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই তিথিতে শিক্ষার্থীরা ভক্তিসহ মা সরস্বতীকে পুস্পাঞ্জলি প্রদান করে। সিরাজগঞ্জের মানুষ সরস্বতী মায়ের পূজায় ভোগ হিসেবে ফলমূলের পাশাপাশি দেন দই মেলা থেকে কেনা দই। এ সময় দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজন আসেন তাদের কুটুম বাড়িতে। জামাইয়রা দই কেনেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। জনশ্রুতি আছে তাড়াশের তৎকালীন জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দইয়ের মেলার আয়োজন করেন। তিনি দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এছাড়া জমিদারবাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। সেই থেকেই জমিদারবাড়ির সামনে রশিক লাল রায় মন্দিরের পাশের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দইমেলার আয়োজন শুরু হয়।
প্রতিবছর মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দইমেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে পসরা সাজান। তবে এখন তিন দিন নয়, একদিন বসে দইয়ের এই মেলা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়ক এলাকায় শুরু হয় এই দই মেলা। জেলার বিভিন্ন স্থানে থেকে দই ব্যবসায়ীরা আসেন এই মেলায়। এখানে খিরখাশা, খিরশা, খাশাসহ বিভিন্ন প্রকার দই মেলায় উঠেছে। ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের ৪ কেজি ওজনের দই বিক্রি হচ্ছে। ভোর থেকে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে দই মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। গত দু’বছর করোনার কারণে কিছুটা স্বল্পপরিসরেই হয়েছিল এই দই মেলা।
দই নিয়ে আসা এনায়েতপুরের সুভাষ ঘোষ ও হরিরাম ঘোষ বলেন, ৫০ বছর ধরে এই মেলায় দই বিক্রি করে থাকি। আমার পূর্ব-পুরুষেরাও এই মেলায় দই বিক্রি করত। এবার ৪০০ হাঁড়ি দই আনা হয়েছে। আশা করছি, দুপুরের মধ্যেই সব দই বিক্রি হয়ে যাবে। গত বছরের চেয়ে এবার দইয়ের চাহিদাও রয়েছে বেশি।
বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের দেবনাথ ঘোষ জানান, দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দইপাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই-ই অবিক্রিত থাকে না।
মেলায় দই কিনতে আসা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জানান, সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে স্বরস্বতী পূঁজা উপলক্ষে প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা বসেছে। প্রতি বছরই এই মেলাতে প্রায় ১শ মণ দই বিক্রি হয়।