সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা একাদশ ৩-১ গোলে চ্যাম্পিয়ন
সিরাজগঞ্জের প্রাক্তন মহুকুমা প্রশাসক শহিদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন স্মৃতি আন্তঃ উপজেলা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবার, ১১ অক্টোবর, জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিরাজগঞ্জের আয়োজনে বিকেলে শহিদ শামসুদ্দিন স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টুর্নামেন্টের সভাপতি ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুল হক টুকু।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শামসুল হক টুকু তার বক্তব্যে বলেন, ৫২ ভাষা আনন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে তা বিজয় লাভ করে। তিনি বলেন ১৯৭১ সালের প্রারম্ভিক যুদ্ধে সিরাজগঞ্জের মহকুমার প্রশাসক এ.কে. শামসুদ্দিন পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে এই গোল্ড কাপ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি এই গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানান আয়োজকদেরকে।
এসময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরও বলেন, প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা প্রাথমিক ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, শিশু-কিশোর ও যুব সমাজ অত্যন্ত মেধাবী এবং আমরা এই মেধা বিকাশের সুযোগই করে দিতে চাই। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতি থেকে তাদের দূরে রেখে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধান অতিথি ডেপুটি স্পীকার আরও বলেন, খেলাধুলার মাধ্যমে ব্যক্তি জীবন গঠন করার সুযোগ রয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যারা খেলোয়াড় তারকা তারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থেকে বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জ সদর কামারখন্দ ২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসনও অর্থ মো. হান্নান মিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. আদুস সামাদ তালুকদার, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) গন পতিরায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) মো. মোবারক হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) রায়হান কবির, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, জেলা ক্রীড়া অফিসার ও টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. মাসুদ রানা। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনোয়ার হোসেন, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এনডিসি মো. রিদওয়ান আহমেদ রাফি, সহকারী কমিশনার রাশেদ হোসাইন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক প্রমুখ। খেলায় ধারাভাষ্যকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. খোরশেদ রায়হান ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূর নবী খান জুয়েল।
ফাইনাল খেলায় তাড়াশ উপজেলা একাদশকে ১- ৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে আবারও চ্যাম্পিয়ান হয় সিরাজগঞ্জে সদর উপজেলা একাদশ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন শহিদ এ. কে শামসুদ্দিন সিএসপি। তিনি পেশাগত জীবনের উজ্জলতার হাতছানিকে উপেক্ষা করে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসেই সিরাজগঞ্জে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবকদের পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে সংগঠিত করেন। এসময় তার নেতৃত্বে ৭১ সালের এপ্রিল মাসে সিরাজগঞ্জ শহরের হানাদার পাকবাহিনী প্রবেশের পুর্ব পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালিত হয়। সে সময় তিনি ছিলেন জনগনের কর্ণেল। পাক বাহিনীর নিকট তিনি হয়ে ওঠেন আতংকের নাম।
একাত্তরের এপ্রিলের শেষের দিকে পাক বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরের প্রবেশের পর তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রী’র সংবাদে ঢাকায় গেলে ষড়যন্ত্রমূলক তাকে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে ১৯৭১ সাালের ১৯ মে পাকিস্তান সিএসপি এর চৌকস কর্মকর্তা এ কে শামসুদ্দিনকে ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।