বিশেষ প্রতিনিধি: বিজয়ের মাসে সিরাজগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক পাঠাগার আয়োজন করল যুদ্ধদিনের গেরিলা গ্রন্থ পাঠ কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। দুমাস ব্যাপী গ্রন্থ পাঠ কার্যক্রমের শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাব দোতলায় পাঠাগার কক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ পাঠ পর্যালোচনা, উপস্থাপন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত, কথাসাহিত্যিক, গ্রন্থেও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকতিয়ার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলের পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের সহ সর্বাধিনায়ক অ্যাড বিমল কুমার দাস, কোষাধ্যক্ষ, জেলা জাসদ সভাপতি বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হাই তালুকদার, লেখকের সহধর্মিনী, পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর ভুইয়া, সহসম্পাদক, বাসদ নেতা সোহরাওয়ার্দ্দী খান, কবি গৌতম সাহা, মনিরুজ্জামান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল ইসলাম জগলু চৌধুরী, বাসদ নেতা নব কুমার, বিটিভি প্রতিনিধি সাংবাদিক জয়নাল আবেদন জয়, পাঠাগার এর পাঠক সদস্যগন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাঠাগার এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দৈনিক সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ইসমাইল হোসেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইকতিয়ার চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম গেরিলা যোদ্ধার দল পলাশডাঙ্গা যুব শিবির এর পরিচালক ছিলেন সে সময়ের ২২ বছরের টসবগে যুবক আব্দুল লতিফ মির্জ্জা। তার নেতৃত্বে পরিচালিত এ বাহিনীতে ছিলেন সোরহাব আলী, বিমল কুমার দাস, আজিজ সরকার, লুৎফর রহমান অরুন, শফিকুল ইসলাম, মনিরুল কবির, মাখন, আজিজ মির্জাসহ প্রায় ৬৫০ যোদ্ধা। এবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সিরাজগঞ্জের চলনবিল এলাকার চারদিকে ৪টি জেলার বির্স্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য যুদ্ধ পরিচালনা করে। সবশেষে ১১ নভেম্বর, তাড়াশ উপজেলা নওগা ইউনিয়নে পাক বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টকে যুদ্ধে পরাজিত এবং নিচিহ্ন করে। এযুদ্ধে ক্যাপ্টেন সেলিমসহ ১১ জন পাক সৈনিক আত্মসমর্পন করে। এ বাহিনীর যুদ্ধ ইতিহাস নিয়েই আমি বইটি লিখেছি। তিনি বলেন আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ট যোদ্ধাদের একজন। একজন যোদ্ধা হিসেবে এ বাহিনীর ইতিহাস আজকের প্রজন্মকে জানানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক পাঠ্গাার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসীয়। অনুষ্ঠানে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির এর সহসর্বাধিনায়ক অ্যাড বিমল কুমার দাস যুদ্ধে পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের বেড়ে উঠা, যুদ্ধ কৌশল, প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধে নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম অতিথি পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের সহ সর্বাধিনায় বিমল কুমার দাস বলেন, এ বাহিনী রাতের বেলায় কোন না কোন গ্রামে আশ্রয় নিতো, সে সময়ে পরিকল্পনা করতো । পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন হামলা করতো কোন না কোন দখলদার বাহিনীর ক্যাম্পে, রাজাকার ক্যাম্পে কিংবা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকাল দালাল নেতাদের আস্তানায়। হিট এন্ড রান ছিলো পলাশডাঙ্গার যুদ্ধ রণকৌশল। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধে পলাশডাঙ্গা গেরিলা যোদ্ধার বাহিনী অসংখ্যা যুদ্ধ পরিচালনা ও বিজয় লাভ করে।
অনুষ্ঠানের অতিথি পলাশডাঙ্গা যুবশিবির এর কোষাধ্যক্ষ, জাসদ সভাপতি আব্দুল হাই তালুকদার, অনুষ্ঠানে এ বাহিনী পরিচালনায় তার অভিজ্ঞতা এ প্রজন্মের পাঠক সদস্যদের সামনে তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির এর যুদ্ধ ইতিহাস গাঁথা নিয়ে লেখা ‘যুদ্ধদিনের ইতিহাস’ গ্রন্থ পাঠ কার্যক্রমের সেরা ০৬ জন প্রতিযোগী উপস্থাপককে বই উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগীকেও পাঠাগার এর পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পাঠাগার এর সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দেশের অন্যতম বৃহত্তম গেরিলা বাহিনী পলাশডাঙ্গা যুবশিবির মুক্তিযুদ্ধে এক দিনের যুদ্ধ ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবের অধিকারের বাহিনী। এবাহিনী বেদের বহরের মতো ৪২ নৌকায় ভাসমান অবস্থায় চলনবিলের বিস্তৃীর্ণ জলরাশিতে অবাধ বিচরণ করতো। বাহিনীর হেড কোয়ার্টার ছিলো ভাসমান বিশাল নৌকায়। যার নাম ছিল বজরা। গেরিলা যুদ্ধের এ বাহিনী ছিলো এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করে। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানে এ বাহিনীর কোন সাহসি যোদ্ধাকে কিংবা বাহিনীকে কোন বিরত্বসূচক পদক দেওয়া হয়নি। এটা জাতির সদস্য হিসেবে আমাদের কাছে লজ্জার বিষয়।