সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস সরকারকে হত্যার ঘটনায় ০৮ সন্ত্রাসী গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ রাউন্ড তাজা গুলি, ২টি চাকু ও ১টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আব্দুল কুদ্দুস প্রতিবন্ধক ছিলেন মনে করেই হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশী তদন্তে উঠে এসেছে।
গত শনিবার, ৫ এপ্রিল, দুপুরে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন বিপিএম, পিপিএম। সংবাদ সম্মেলনের প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল বিপিএম, পিপিএম।
হত্যার দায়ে পাবনা জেলার চাটমোহর থানার বাঙ্গালা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আমীর সরকারের ছেলে মো. জহুরুল ইসলাম তুষার (২৫), একই থানার কাটাখালি পূর্বপাড়া গ্রামের মো. আমীর সরকারের ছেলে মো. রহমত আলী (৪৫), দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী থানার সুজাপুর বানিয়াপাড়া গ্রামের বিকাশ মহন্তের ছেলে বিশ্বনাথ মহন্ত (২৩), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সুজা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত গফুর মোল্লার ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (৪০), রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণপুর উত্তরপাড়ার মৃত গকুল চন্দ্র দাসের ছেলে শ্রী বলরাম চন্দ্র দাস (৩৮), তাড়াশ উপজেলার গুড়পিপুল গ্রামের মৃত শংকর চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস (৪০), একই উপজেলার টাগরা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত জুরান উদ্দিনের ছেলে মো. রহমত আলী (৪৮) ও দেওঘর গ্রামের মৃত গণেশ উরাওয়ের ছেলে শ্রী সুনীল উরাও (৪৫)কে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন বলেন, বছর খানেক আগেই তাদের পরিকল্পনা ছিল হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। ২০১৯ সালে বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের এসআই নান্নুর ওপর সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে গুলি করেছিল। ওই মামলায় সাক্ষী ছিলেন ভিকটিম আব্দুল কুদ্দুস। ওই মামলার কোন কোন আসামি ইতিমধ্যে এনকাউন্টারে মারাও গেছেন।
সর্বহারাদের ধারণা যাদের আসামি এরং গ্রেফতার করা হয়েছে-এব্যাপারে তাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। এজন্য তারা কুদ্দুছের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এ কারণেই তারা আব্দুল কুদ্দুসকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সর্বহারা সদস্যরা তাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ক্ষেত্রে তাকে বাধা মনে করেছে। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রারম্ভিবক বক্তব্যে জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ভোগলমান বাজারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকারকে হত্যার পর পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির লিফলেট ও স্লোগান দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকেই ডিআইজি মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তৎপর হয়। পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, গোয়েন্দা পুলিশের চৌকস সদস্য ও তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম ঘটনার পর থেকে টানা প্রায় দুই মাসের নিরলস পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে মামলার রহস্য উদঘাটন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআ্ইজি রাজশাহী রেঞ্জ জানান, শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর রাতে তাড়াশের দেশীগ্রাম ইউনিয়নের দোগাড়ীয়া ঈদগাহ মাঠ এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ একটি সন্ত্রাসী দল মহড়া দিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াশ থানার একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আগ্নেয়াত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দানকারী তাড়াশ থানার তালম ইউনিয়নের দেওঘর গ্রাম থেকে শ্রী সুনীল উরাওকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ২০০২ সালে বেলকুচির রান্ধুনীবাড়ী পুলিশ ক্যাম্প থেকে লুট হওয়া ১টি এসএমজি ১টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ১টি থ্রি নট থ্রি কাটা রাইফেল ১১ রাউন্ড থ্রি নট থ্রি তাজা গুলি, ১টি গুলির খোসা, ২টি চাকু, ১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ১টি ভ্যানগাড়ি উদ্ধার করা হয়। তিনি সম্মেলনকে অবহিত করেন হত্যাকান্ডের বিষয়ে তার নির্দেশনা ছিল ক্লু উদঘাটন এবং উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতির। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ কুদ্দুছ হত্যার আসামী গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে সক্ষম হয়।
এসময় পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, কুদ্দুস হত্যায় জড়িত সবাই পূর্ব বাংলা সর্বহারাপার্টির সক্রিয় সদস্য। হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১৪/১৫ জন অংশগ্রহণ করে। হত্যা মিশনে মোট ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়। হত্যাকাণ্ডে মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া মো. জহুরুল ইসলাম, তুষার, শরীফ, ফারুক, দেলু তার হেফাজতে থাকা কাটা রাইফেল দিয়েই গুলি করে কুদ্দুসকে হত্যা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে হেলাল উদ্দিন, ইসরাইল হোসেন বাবু, শহিদুল ইসলাম ফিলিপসসহ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন স্মারক প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে গ্রেফতারকৃত অস্ত্র ও আসামীদের প্রদর্শন করা হয়।