কাজিপুর প্রতিনিধি: কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গাছের চারা রোপণ করবেন প্রধান শিক্ষিকা। একাজের জন্য ইতোমধ্যে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা উঠানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার আলমপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শেখ রাসেলের জন্মদিনে বিদ্যালয় চত্বরে রোপণ করা হয়েছে একটি আম গাছ, একটি কাঁঠাল গাছ ও একটি মেহগনি গাছের চারা। যদিও নির্দেশনা ছিল ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রধান শিক্ষিকা নিলুফা আখতার ওই চাঁদা আদায়ে শিক্ষার্থীদের এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া বলে, হেড ম্যাডাম এসে বলেছে টাকা দিতে। আম্মুকে বলে টাকা নিয়ে এসে ম্যাডামকে দিয়েছি। যারা দিতে চায় নাই তাদেরকে জোর করেছে ম্যাডাম। সিহাব বলে, টাকা দিতে চাই নাই। কিন্তু ম্যাডাম গালিগালাজ দেয়। পরে মাকে বইলা টাকা দিছি।
চতুর্থ শ্রেণির ফাতেমা বলে, কয়েকটা গাছের চারা কেনার জন্যই ম্যাডাম আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। ম্যাডাম নিজেই কিনে দিতে পারতো।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের টাকারও সঠিক কোন ব্যবহার হয়নি। সব টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ের স্লিপের বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে শুধু দুইটা টেবিলের ওপরের কাচ, বঙ্গবন্ধু ম্যুড়াল, একটা ওয়েট মাপার মেশিন, দুইটা দেয়াল ঘড়ি। এতে মোট খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। রুটিন মেইনটেইনেন্সের কাজের জন্য বরাদ্দের ৪০ হাজার টাকার কিছুই করা হয়নি। প্রাক-প্রাথমিকের সজ্জিত করণের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কিছুই করা হয়নি। করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বরাদ্দের ১২ হাজার টাকায় কিচ্ছু কেনেন নি প্রধান শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ে যাবার মত নির্দেশক কোন সাইনবোর্ডও নেই। ভাঙা নোটিশ বোর্ড শূন্য ঝুলে আছে।
প্রধান শিক্ষিকা নিলুফা আখতারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এতো কিছু ধরলেতো হবে না। কোন কিছু জানতে চাইয়েন না।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছেন কেন জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। বলেন কয়েকটা গাছের চারা কিনতে আবার ছাত্রদের কাছ থেকে চাঁদা উঠাতে হবে নাকি! পরে স্বীকার করে বলেন, আসলে এটা ভুল হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদা নেয়া আমার ঠিক হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, কোন ভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতে পারবে না শিক্ষকরা। গাছ লাগানোর জন্যও না। বিষয়টা আমি জেনেছি। ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।