চৌহালীসিরাজগঞ্জ

চৌহালী উপজেলায় দিগন্ত  জুড়ে  হলুদের সমারোহ

চৌহালী প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দুর্গম যমুনা নদীর চরসহ  পুরো উপজেলার সরিষার মাঠ এখন নব বধুর সাঝে সেঁঝেছে । যেনো হলুদ শাড়ি পড়ে ঘুমটা টেনে বসে রয়েছে নব বধু। এলাকার ফুলপ্রেমি যুবক-যুবতিরা সরিষা খেতে মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত।  রাতে শীত দিনে রোদ থাকায় সরিষা চাষ করে লাভের মুখ দেখছে এখানকার কৃষক ।

এ বছর উপজেলার প্রায় ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।  উপজেলার সঁদিয়াচাদপুর, স্হলচর,বাঘুটিয়া, ঘোরজান, খাষকাউলিয়া, খাষপুকুরিয়া ও উমারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চর এলাকাসহ ফসলের মাঠ এখন সরিষার ফুলে ফুলে ভরে গেছে।  এছাড়া পাঁচটি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী কিছু জমিও সরিষা হলুদ ফুলে ভরে গেছে।

এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের আশ করছেন সরিষা চাষিরা। যমুনা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের পোলি-দো-আঁশ মাটিতে সরিষা চাষ ভালো হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে  সরিষার বীজ ও সরবরাহ করায় সরিষা চাষে চাষিদের বাড়তি খরচ কম হয়েছে । এ বছর সরিষার দাম ভালও পাওয়ায় দিন দিন চৌহালীতে সরিষা চাষ বেড়েছে ।

স্থানীয় চাষিদের ভাষ্যমতে, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। সেঁচ ও নিড়ানি ছাড়াই কম খরচে সরিষা জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ফলন বেশ ভালো পাওয়া যায়।

খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের চাষী আব্দুল খালেক জানান, আমি ৭ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে সকল জমিতে । আবহাওয়া ভালও থাকলে সরিষা চাষে ভালোই লাভ হবে। পলি দো-আঁশ মাটিতে মাঝারি তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত সূর্য্যের আলো পেলে সরিষার ফলন ভালো হয়।

খাষকাউলিয়া ইউনিয়নের মো. নাসির উদ্দিন সাদ্দাম জানান, আমি ১২ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি ৫৫থেকে ৬০ মন পাবো,বর্তমানে ৩ হাজার ৮ শত টাকা বিক্রি করা যায়।  আর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারি ভাবে বীজ ও সার দিয়েছে তাতে খরচ খুব কম হয়েছে ।

৩ হাজার ৫০০ শত থেকে ৩ হাজার ৯০০ শত টাকা মন বেচা কেনা হচ্ছে।  তেল জাতীয় এ ফসলটি কবে থেকে এ এলাকায় চাষ হচ্ছে তা কেউ জানেনা, তবে আমার দাদার বাবারাও সরিষার আবাদ করেছে বলে জানান শতবর্ষী মারমা গ্রামের মোঃ নওশের আলী মোল্লা।

বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি থাকায় সরিষা তেলের প্রতি মানুষ ঝুঁকছে । ফলে বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় বেশ লাভবান হচ্ছে চাষিরা। ফলে গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষিরা একে অপরের দেখাদেখিতে লাভজনক সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর যমুনার চরে বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৮ মন সরিষা উৎপাদিত হয়। চরাঞ্চলের পলি দো-আঁশ মাটিতে লাভ জনক সরিষা চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সরিষা চাষিদের বীজ,সার, পরামর্শ ও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগীতা পাওয়ায় আগামীতে আরও বেশি জমিতে সরিষা চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় চাষিরা।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান,গত বছর ২ হাজার২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ বছর প্রায় ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে । গত বছরের তুলনায় ২২৫ হেক্টর বেশি। সরিষা একটি তেল জাতীয় ফসল।  সরিষা ও চিনা বাদাম এ এলাকায় বেশি আবাদ হয়।  কবে থেকে সরিষার আবাদ হচ্ছে কেউ তা জানে না। পুরাতন জাত সরিয়ে নতুন নতুন জাতের আবাদ হচ্ছে এর মধ্যে বারি- ১৪,১৫, ১৭ ও ১৮ বিনা-৯ ও রাই-৫ ।  সরিষার তেল ত্বক ভালো রাখে, হৃদযন্ত্রের কার্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়,চর্ম রোগ ও সর্দি বা ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে ।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাজেদুর রহমান জানান,চৌহালী উপজেলায় লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে আশা করছি । নতুন জাতে সরিষা নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।  বারি-১৭, বারি-১৮ অন্য জাতের চেয়ে বেশি ফলন দিবে। এ উপজেলার মানুষের তেলের চাহিদা মিটিয়ে অন্য উপজেলায়ও যোগান দিবে। মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button