সদরসিরাজগঞ্জ

একটি বাড়ি, একটি জীপ গাড়ি, একজন শামীম তালুকদার

আমার পৌত্রিক নিবাস শহরের চৌরাস্তা মোড় এলাকায়। বাসার সন্নিকটে অনেকের মাঝে একজনের বাসা। বাসার সামনে সোনার দোকান।  একদিন ওই বাড়িতে দেখলাম এক সুঠামদেহী যুবক অনেক যুবকের সঙ্গে তেজোদীপ্ত চোহারায় কথা বলছেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম নাম তার আ ফ ম মাহবুবুল হক। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা। এসেছেন কেন্দ্র থেকে এসেছেন সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর সপক্ষে কাজ করতে। বড়দের এর ওর কথায় জানলাম নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়াও উনি এসেছেন বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে। সিরাজগঞ্জের ছাত্র যুবকদের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে। সচেতন করতে। তিনি কখনও থাকেন কলেজ হোস্টেলে। তবে প্রায়ই অবস্থান নেন ওই বাড়িতে। চষে বেড়ান পুরো মহকুমার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।  সময়টা ছিল ৭০ এর নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে। 

ওই বাড়ির কর্ণধার মোতাহার হোসেন তালুকদার নির্বাচনে এমএনএ পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে জেল থেকে লড়ছেন। পরে তিনি জেল থেকেই জনতার ভোটে বিজয়ী হন।

নির্বাচনের দিন অথবা পরদিন এক সন্ধ্যায় ওই বাড়ির সামনে থামলো একটি জীীপ গাড়ি। গাড়ি থেকে নামলেন ঢাক মাথাওয়ালা, হালকা ধরনের শারিরীক গঠনের এক ব্যক্তি। তিনি মাথা উচু করে গাড়ি থেকে নামলেন। জানলাম নাম তার এম. মনসুর আলী। (পরে আমাদের জাতীয় নেতা শহিদ এম. মনসুর আলী।) এছাড়াও দেখেছি ওই বাড়িতেই চার খলিফার এক খলিফা সাজাহান সিরাজকে। দেখেছি আরও জাতীয় নেতাদের। শুনেছি ওই বাড়িতেই পাকিস্তানের জাতীয় নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দ্দীসহ আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা রাত্রিযাপন করতেন এবং রাজনৈতিক শলা পরামর্শ করতেন।

বাড়ির মালিক মোতাহার মাষ্টার ছিলেন সিরাজগঞ্জে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তার জীবনে ছিলেন মহকুমা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি। ভাষার দাবীর আন্দোলনের কারণে পেয়েছেন একুশে পদক। আমৃত্যু আওয়ামী লীগার মোতাহার হোসেন তালুকদার।  বঙ্গবন্ধু ডাকতেন মোতাহার মাষ্টার নামে।

বাড়ির সামনে দেখতাম একটি জীপ গাড়ি। বাহির বাইরে প্রায়শই দেখতাম একটি কালো ট্্রাক। ট্রাকটা ব্যবসার কাজে ব্যবহার হতো। আর জীপটি ব্যবহার হতো মুলত মাষ্টার সাহেবের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক কাজে।

৭১ সালে সিরাজগঞ্জে পাক বাহিনীর প্রবেশের পূর্বে জীপটিকে বাঁচানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। ডুবিয়ে দেওয়া হয় পানিতে। শুনেছি সেই পানির ভিতর থেকেই জীপগাড়িটির যন্ত্রাংশ খুলে খুলে লুট করা হয়েছিল। এট্ ারাজনৈতিক আক্রোশ ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। স্বাধীনতার পর জীপটি আবারও মেরামত করা হয়।

৭৫ সালে প্রয়াত জননেতা মোতাহার হোসেন তালুকদার বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাকশাল পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় সিরাজগঞ্জের গভর্ণর মনোনিত হন । তখন ওই জীপটি দেখতাম তদানিন্তন যুব নেতা ফিরোজ তালুকদারকে ব্যবহার করতে।

আজ জীপটি নেই । জীপের মালিক জননেতা মোতাহার হোসেন তালুকদারও প্রয়াত। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই বাড়ির কনিষ্ঠ পুত্র শামীম তালুকদার এর সহধর্মীনি সিরাজগঞ্জ-২ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আসন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে ওই বাড়ীর সন্তান প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদার এর কনিষ্ঠপুত্র শামীম তালুকদার (লাবু) চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল পত্রিকায় দেখলাম শামীম তালুকদার নির্বাচনে জীপ প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। ব্যবসায়ী, সমাজসেবক শামীম তালুকদার এর নির্বাচনী প্রতীক জীপ। ইতিমধ্যেই, জীপ প্রতীকের শামীম তালুকদার জেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হলে পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।  ভাবলাম- একটি রাজনৈতিক ঐতিহ্যেরও বাড়ি, একটি জীপ, একটি প্রতীক, একজন শামীম তালুকদার। এটা কি শুধুই কাকতালীয়?  না-কি এবাবের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারগন জীপ গাড়ির পক্ষেই রায় প্রদান করে রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বাড়ি ও জীপ গাড়ির কথাই মন করিয়ে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button