রুবাইয়া জাহান রিপা: টিউলিপ ফুল মানেই চোখে ভাসে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস। শীত মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করে নেদারল্যান্ডসে টিউলিপ ফুল ফোঁটার সৌন্দর্য দেখতে। যত বেশি শীত তত টিউলিপের রূপ বিকশিত হয়। সেখানে চোখ জুড়ানো বহু রঙের টিউলিপ ফুলে মুগ্ধ হয় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা। এ তো গেল ভিনদেশের গল্প।এমনি টিউলিপের অসাধারণ গল্প তৈরি হয়েছে উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম দর্জিপাড়া ও শাড়িয়ালজোত এলাকায়।
সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ ছাউনির নিচে সারি সারি টিউলিপ ফুটেছে। রাজসিক সৌন্দর্যের এ ফুল ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। দেখতে দর্শনার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। কেউ ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন আবার কেউ ভিডিও কলে বন্ধু-স্বজনদের দেখাচ্ছেন টিউলিপের সৌন্দর্য।
গত বছরই প্রথম ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে খামার পর্যায়ে শুরু হয়েছিল টিউলিপ চাষ। ৮ জন কৃষক ৪০ শতক জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার ফুল চাষ করে ৪০-৪৫ দিনে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা করে ইনকাম করে।সেই সফলতায় এ বছর প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন।
বানিজ্যিক ভাবে টিউলিপ উৎপাদনের এবারের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
এ বছর আরও নতুন ১২ জনসহ মোট ২০ জন চাষিকে নিয়ে শুধুমাত্র দর্জিপাড়ায় দুই একর জমিতে এক লাখ বীজ বপন করা হয়েছে।ইতিমধ্য ৬ প্রজাতির ১২টি রঙের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফুটেছে বেশ কয়েকটি।
বাহারি রঙের এসব ফুল নজর কাটছে স্থানীয় সহ বাহির থেকে আসা পর্যটকদের।টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও হাসি দেখে চাষীরা অভিভূত।এছাড়া দূর দূরান্ত থেকে যারা ফুল বাগান দেখতে আসেন তাদের জনপ্রতি টিকিট ৫০ আবার কোথাও ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ফুল বিক্রি বাদে দৈনিক বাগান থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা ইনকাম হচ্ছে।
বরফের পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় এ উপজেলায় বেশ সময় শীত থাকে। টিউলিপ ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল হিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে পূর্ণ বয়সের আগে মানসম্মত ফুল নাও ফুটতে পারে।স্বাভাবিকভাবে রোপণের ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কলি আসতে শুরু করে এবং ২৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত ফুল স্থায়ী হয়। অনেক সময় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ব্যতিক্রমও হতে পারে।
পর্যটকদের ব্যপক আগ্রহদেখে ঠাকুরগাঁও ইউএসডিও এর নির্বাহী পরিচালক জানান,ইতিমধ্য আমরা যে সারা পেয়েছি, সারাদেশের মানুষ এইখানে আসছে।এইখানের মানুষের যতটা আগ্রহ আছে তাতে শুধু শুধুমাত্র টিউলিপ এর সময় নয় সারা বছর এর আয়,কর্মসংস্থান,পর্যটন ও কৃষি ইকোটুরিজম এর ব্যবস্থা করা হবে।এছাড়া জানুয়ারিতে যেহেতু এইখানে শীতকাল সেইসময় নেদারল্যান্ডস এ গ্রীস্মকাল তাই সেই সময় আমরা বড়দিন,নতুন বছরে এই ফুলগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করতে পারব।এজন্য প্রয়োজন সরকারের ব্যাপক সহযোগিতা।
উল্লেখ্য, টিউলিপ শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি মূলত নেদারল্যান্ডসের ফুল। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিডসহ সব প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়।