কামারখন্দসিরাজগঞ্জ

শেখ হাসিনা একটা রক্তপিপাসু: কামারখন্দের জনসভায় বিএনপি নেতা টুক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, শেখ হাসিনা একটা রক্তপিপাসু মহিলা। সেদিন কিভাবে নির্লজ্জের মতো বললো, আবু সাঈদ মারা গেছে রক্ত কই। তুমি যেয়ে সাঈদের মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো তার কি রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের রক্ত নিয়ে খেলা করতে চায়, তাই সে রক্ত দেখে না।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ধোপাকান্দি সরকারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য টুকু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২৪ সাল যত এমপি ছিল সব এমপি ছিল ভুয়া। কোন ভোট হয়নি, সবাই ভোট ছাড়া এমপি। আমাকে কড্ডা দিয়ে, সায়েদাবাদ দিয়ে বাড়িতে যেতে দেওয়া হতো না। একটা কুখ্যাত একটা চেয়ারম্যান ছিল সায়েদাবাদে, দা ও বন্দুক নিয়ে বসে থাকতো। পুলিশের ছত্রছায়ায় আমার পথ বন্ধ করতে পেরেছিল। কিন্তু এই শহীদদের রক্তের পিচ্ছিল রাস্তায় তোমরা কোথায় পালিয়ে গেছো। আমরা রাজনীতি করি আমরা পালাই না। বিএনপি কোনোদিনও পালায় নাই। মঞ্চভর্তি লোক আছে পিছে দাঁড়িয়ে আছে। এমন একটা লোক নাই যে জেলখানায় যায় নাই, এমন একটি লোক নাই যাদের ওপর নির্যাতন করে নাই।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, শহীদ সাঈদ-মুগ্ধ, সিরাজগঞ্জের রঞ্জু, লতিফ, সুমনসহ ১৪ জন এবং সারা দেশের প্রায় দুই হাজার শহীদদের সালাম জানাই। তাদের রক্তে যদি স্ফুলিঙ্গ না হতো তাহলে বাংলাদেশের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না। শেখ হাসিনার গোলামে রূপান্তরিত হতো। আজকে মুক্ত দেশে কামারখন্দে এসে মিটিং করতে পারছি। এটা তো স্বপ্ন ছিল। যে কামারখন্দে মিটিং করতে এসে একজন মহিলাকে নির্মমভাবে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রভার গ্রহণ করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। একটি দল উপহার দিয়েছিলেন। যার নাম বিএনপি। উনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাস করতেন। তাই সবাইকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে ৭১-৭৫ এর চেয়েও খারাপ ঘটনা ঘটিয়েছে। যে কারণে খুনি হাসিনা জনগণের রোষে পড়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তার ছওয়াল-পাল যারা আছে তারাও দেশত্যাগ করে চলে গেছে। তবে আমি শুনতে পাই কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এখনো দেশে আছে। দুষ্ট লোকে বলে, তারা নাকি আমার দলের কর্মীদের ছত্রছায়ায় আছে। এটাই যদি সত্য হয় যারা করেছে তারা বিএনপি করতে পারবে না।

টুকু আরও বলেন, খালেদা জিয়ার চেয়ে বড় গণতন্ত্রী আর কেউ নাই, তিনি কেয়ারটেকার সরকার দিয়ে, নির্বাচন দিয়ে পরাজিত হয়ে বিরোধী দলের চেয়ারে বসেছিলেন। শহীদ জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশের হাল ধরেছিল। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরে শ্মশান বাংলাদেশ ছিল, সেই শ্মশ্বান বাংলাদেশকে একটা সুজলা-সফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ গড়েছিল। তেমনি বেগম জিয়া এ দেশে সবচেয়ে শিল্প উন্নয়ন করেছিল। তার সন্তান তারেক রহমান অলরেডি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সনদ ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। যাতে বলা হয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট হবে। বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাসিনার ফাঁদে পা দেবেন না, আপনাদের রক্ষা করার জন্য বিএনপি আছে এবং থাকবে। কোন সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার করা হবে না। তবে এখন আওয়ামী হিন্দু যারা মিছিল করছে, তারা চায় যাতে দেশে একটা রায়ট (দাঙ্গা) হয়। আর এই রায়টের সুযোগ নিয়ে হাসিনা দেশে আসতে চায়। কিন্তু সেই গুড়ে বালি, তোমার (শেখ হাসিনা) পক্ষে বাংলাদেশে আসার সুযোগ নাই। তোমার হাত রক্তে রঞ্জিত, দুই হাজার মায়ের বুক খালি করেছ।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদিউজ্জামান ফেরদৌসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রেজাতে রাব্বি উথানের সঞ্চালনায় জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খাঁন আলীম। এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশীদ খান হাসান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button