কামারখন্দসদরসিরাজগঞ্জ

গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফল আব্দুর রশিদ

কামারখন্দ উপজেলায় প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন আব্দুর রশিদ। মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত হলুদ, কালো ও সবুজ তরমুজে ভরে গেছে ক্ষেত। আশানুরূপ ফলনে হাসি ফুটেছে রশিদের মুখে। একই সঙ্গে বেশ লাভেরও আশা করছেন তিনি।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার মুগবেলাই গ্রামের কৃষক রশিদের ক্ষেতে মাচায় ঝুলছে শত শত তরমুজ। তিনি ব্যবহার করেছেন তরমুজের ২টি জাত। একটি হলো ‘সুগার কিং’ এই জাতের বৈশিষ্ট্য হলো তরমুজের গায়ের রং সবুজ কিন্ত ভিতরের রং হলুদ, আরেকটি জাত হলো ‘কনিয়া’ উক্ত জাতের বৈশিষ্ট্য হলো বাহিরে কলো রংয়ের কিন্ত ভিতরের রং লাল। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়ও তরমুজের কোনোটি বাজারজাতের সময় হয়েছে, কোনোটি এখনো জালি। খেতেও সুস্বাদু।

তরমুজ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি এ দেশের বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়। এ তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। ছোট, লম্বাটে, ডিম্বাকার, কালো খোসা, ভেতরে টকটকে লাল শাঁসের তরমুজগুলো অসময়ে ওঠার কারণে বাজারে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। কোনো স্থানে হলুদ রঙের খোসার অমৌসুমী তরমুজেরও চাষ হচ্ছে। দিন দিন অমৌসুমে তরমুজ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এক বিঘায় এ জাতের তরমুজের ফলন হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ টন।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় সহযোগী সংস্থা এনডিপি এর সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর কৃষিখাতের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। এছাড়াও এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিট ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বীজ, মালচিং পেপার, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ এমনকি চাষাবাদের জন্য নগদ টাকা ইত্যাদি প্রদান করে বিভিন্ন চাষীকে স্বাবলম্বী করে তুলছে।

কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, আমি প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। ইতোমধ্যে আমার ক্ষেত তরমুজে ভরে গেছে শুরু করেছি বিক্রিও। চলতি সপ্তাহে তরমুজ পুরোপুরি বিক্রি শুরু করবো। তরমুজ চাষে আমার সবমিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকাররা এসে দরদাম করে গেছে। প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা। এ হিসেবে আমি অন্তত ৯০ থেকে ৯৫ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় আমার কমপক্ষে ছয়গুণ লাভ হবে।

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা এনডিপি এর সমন্বিত কৃষি ইউনিট তাকে তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বীজ, মালচিং পেপার, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ এমনকি চাষাবাদের জন্য নগদ টাকাও দিয়েছে। আমরা প্রথমে একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও এখন দেখছি আসলেই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাচায় তরমুজ চাষের কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা কৃষক রশিদের। সেকারনে এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষিবিদ সার্বক্ষণিক পরামর্শ এবং মানুষিক সাপোর্ট দিয়েছেন।

আব্দুর রশিদ আরও বলেন চলতি বছর এই তরমুজ বিক্রি শেষ হলে তিনি আরও এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ সম্প্রসারণ করবেন। আবদুর রশিদের সফলতা দেখে চলতি বছর জুন মাসে আরও তিনজন কৃষক নিজস্ব অর্থায়নে তরমুজ চাষ করবেন। তারা শুধু এনডিপি থেকে কারিগরি পরামর্শ আশা করেন।

১৩ মে আব্দুর রশিদ এর ক্ষেত পরিদর্শন করেন সিরাজগঞ্জ খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর। এসময় উপস্থিত ছিলেন এনডিপির পরিচালক (ঋণ সহাংতা কর্মসূচি) মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক (ঋণ সহাংতা কর্মসূচি) সাইফুল ইসলাম সহ সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কর্মকর্তাবৃন্দ।

এসময় উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদেরকে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধ করে থাকে। বেসরকারি সংস্থা এনডিপি সে কার্যক্রম নিয়মিত করে যাচ্ছে। আব্দুর রশিদসহ সকল তরমুজ চাষী বেশ লাভবান হবেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য উপরিচালক এনডিপি কে ধন্যবাদ জানান।

মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে পিকেএসএফ এর মাধ্যমে এনডিপি কৃষির আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, বেকারত্ব হ্রাস এবং পুষ্টির নিশ্চয়তায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।আব্দুর রশিদের সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষক তরমুজ চাষে আগ্রহী হবে সেটা আমদের প্রত্যাশা।

শুধু আব্দুর রশিদ নয়, তার সফলতা দেখে উপজেলার আরও অনেকই চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ। এবং পাচ্ছেন সফলতা।

জানা যায়, কামারখন্দ উপজেলার ধামকোল গ্রাম, সেনগাতী গ্রামে এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রকোনা গ্রামে কৃষি খাতের তরমুজের অন্যান্য  প্রদর্শনীসহ কৃষক নিজস্ব উদ্যোগে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সুগার কিং, ইয়োলো ড্রাগন, সূর্যডিম এসব হাইব্রিত জাতের অমৌসুমের তরমুজ চাষ হয়েছে। সরেজমিন এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অনেক কৃষক এসব গাছের পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ ফল তুলছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষক আরও লাভবান হতেন।

এ প্রসঙ্গে এনডিপি’র কৃষিবিদ বলেন, পিকেএসএফ’র অর্থায়নে এনডিপি সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষিখাতের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। আশা করি মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের প্রযুক্তি এই এলাকায় আরও সম্প্রসারিত হবে। এক্ষেত্রে এনডিপি কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকারের কৃষি বিভাগও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই প্রযুক্তি আগামীতে একটি ক্লাস্টারে পরিনত হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button