প্রতিদিন প্রতিবেদক: তোফা হাসান, জন্ম ১৯৬০ সালের ৩ জুন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার সয়াগোবিন্দ গ্রামে। পিতা প্রয়াত এরশাদ আলী। শৈশব কৌশরে তোফা হাসান বেড়ে উঠেছেন সিরাজগঞ্জ শহরে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা স্থানীয় জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এসএসসি ১৯৭৫ সালে। এইচএসসি ১৯৭৭ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে। ১৯৭৯ সালে একই কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি। কলেজ জীবনেই এই অভিনেতার অভিনয়ে হাতেখড়ি। আয়না ও জনৈকের মহাপ্রয়ান নাটকের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন।
১৯৭৮ সালে তিনি যুক্ত হন সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যের থিয়েটার সংগঠন-তরুণ সম্প্রদায়ে। তিনি ছিলেন এই নাট্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তরুণ সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় অভিনয় করেন, ওরা কদম আলী, ইবলিশ, ইলেকশন কেরিকেচার, এই দেশে এই বেশে, বাসন, সাত, পুরুষের ঋণ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে। সেই থেকে শুরু আর পিছনে ফিরে তাকাননি এই অভিনেতা।
তোফা হাসান মফস্বল শহরের গন্ডি পেরিয়ে ১৯৮৪ সালে প্রথম অভিনয় করেন ছোট পর্দায় বিটিভিতে তরুণ সম্প্রদায়ের ‘সাত পুরুষের ঋণ’ নাটকে। প্রশংসিত হন দর্শকের।
১৯৮৯ সালে কাজ শুরু করেন কুষ্টিয়া হিসনা থিয়েটারে। একনাগারে কাজ করেন ৫ বছর। অভিনয়ের বাইরে শুরু করেন নাটকের নির্দেশনা। এসময়ে হিসনা থিয়েটারে পথ নাটক ও হাফ ডজনের মত নাটকের নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
মঞ্চ আর অভিনয় তার রক্তে মিশে যায়। ১৯৯৩ সালে যুক্ত হন দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন ঢাকার থিয়েটার বেইলী রোড এর সাথে। সান্নিধ্যে আসেন রামেন্দু মজুমদারসহ দেশের প্রথিতযশা শিল্পী ও নির্দেশকদের।
থিয়েটারে থাকাকালিন অভিনয় করেন বিভিন্ন নাটকের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। এসময়ে তার উল্লেখযোগ্য নাটক এখনও ক্রীতদাস, জন্মদিন, মেহেরজান একবার, মেরাজ ফকিরের মা, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, কুহকজাল, মুক্তধারা নাটকে। আবারও দর্শক নন্দিত হন তিনি। অভিনয়ের টানে ব্যাংকার তোফা হাসান চাকরি স্থানান্তর করেন ঢাকায়। ঢাকায় তোফা হাসান মেরাজ ফকিরের মা নাটকের ২০৪টি ও পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটকের ২০৩ টি প্রদর্শনীতে অনবদ্য অভিনয় করেন।
১৯৮৫ সাল থেকে তোফা হাসান মঞ্চ ও মঞ্চের বাইরে ছোট পর্দায় টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন। বিটিভির তালিকাভুক্ত এই শিল্পী অভিনয় করছেন বিভিন্ন একক ও ধারাবাহিক নাটকে। নাটকের গন্ডির পেরিয়ে এই গুণি শিল্পী- ‘এই তিনি রাজধানী, দরিয়া পাড়ের দৌলদিয়া, দুই বিয়াইয়ের কৃতির্’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন।
ব্যাংক কর্মকর্তা তোফা হাসান এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। তবুও থেমে নেই তার মঞ্চ আর ছোট পর্দায় অভিনয়।
ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী নাদিয়া হোসেন গৃহিনী, ১ ছেলে মিঠুন হাসান, গান পোকা ব্যান্ডের ভোকালিস্ট। এছাড়াও মিঠুন কাজ করেন মিডিয়াতে ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে। মেয়ে- জয়ী হাসান, স্নাতকোত্তর শেষ করে স্বামী-সন্তান নিয়ে পরিচালনা সংসার করছেন নিজ সংসার।
এই গুণি শিল্পীকে সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন তরুণ সম্প্রদায় সংস্থার ৪৪ বছর পূর্তিতে সংবর্ধিত করল। গতকাল শহিদ এম মনসুর আলী অডিটরিয়ামে সংর্বধনা অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সিরাজগঞ্জের আর এক কৃতী সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, কবির বিন আনোয়ার। এসময় পাশে ছিলেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. ফারুক আহাম্মদ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মমিন বাবু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তরুন সম্প্রদায়ের প্রধান পরিচালক আসাদুজ্জামন পবলু ও সিরাজগঞ্জের নাট্য ব্যক্তিত্ব হাফিজুল ইসলাম সামাদ প্রমুখ।
এমন একজন আলোকিত নিবেদিতপ্রাণ নাট্যযোদ্ধাকে সংবর্ধিত করতে পেরে গর্বিত তরুন সম্প্রদায়, গর্বিত সংস্কৃতি সেবীরা। এদৃশ্যই চোখে পড়ল শহিদ এম. মনসুর আলী অডিটরিয়ামে শুক্রবারের সন্ধ্যায় অভিনেতা তোফা হাসানের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়ার সময় অতিথি-দর্শকদের মুখচ্ছবির উজ্জলতায়।