তাড়াশসিরাজগঞ্জ

তাড়াশে ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষক হতাশ

তাড়াশ প্রতিনিধি: শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ধানের ভরা মৌসুমে হাট-বাজারে নতুন বোরো ধানের কাঙ্খিত দাম না পেয়ে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকেরা হতাশ হয়ে পরেছেন। তাঁরা ধানের ভালো দাম না পাওয়ার জন্য দায়ী করছেন ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। আর মাঝ জ্যৈষ্ঠে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধান এরই মধ্যে কাটা ও মাড়াই সম্পূর্ণ হয়েছে।

তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. আছের আলী বলেন, ব্রি-২৯, ব্রি-২৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯০, ব্রি-কাটারীভোগ, স্থানীয় জাত আব্দুল গুটি, সুবল লতাসহ এ পর্যন্ত যে সকল জাতের বোরো ধান কাটা হয়েছে তা গড়ে ২০ থেকে ২৭ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। এতে কৃষকেরা খুশি হলেও বর্তমানে হাট বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে ধানের কাঙ্খিত দাম না পেয়ে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

 গুল্টা গ্রামের কৃষক মো.আজিজুর রহমান জানান, হঠাৎ করেই গত ২০ থেকে ২৫ দিন হলো হাট বাজারে ধানের দাম অনেক কম। আবার ধান ব্যবসায়ীরা ধানই কিনছেন পরিমাণে খুবই কম। অথচ ধানের আমদানি প্রচুর পরিমাণ।

এ দিকে বিনসাড়া গ্রামের কৃষক সোলেমানসহ একাধিক কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধান কাটা, মাড়াই খরচ, সেচের দাম, জমির লীজ মানি দেওয়াসহ পারিবারিক প্রয়োজনে ধান উঠার পরপরই বিশেষ করে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের নতুন ধান বিক্রি করতে হয়।

কিন্তু বর্তমানে ধানের দাম অস্বাভাবিক ভাবে পরে গেছে। এতে করে বর্তমান বাজারে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে বারুহাঁস ইউনিয়নের দিঘরিয়া গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান জানান, হয়তো মৌসুম শেষে ধানের দাম বাড়বে।কিন্তু প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকেরা সে সুফল পাবেন না। কেননা অনেক কৃষকেরই জরুরি প্রয়োজনে এখন ধান বিক্রির টাকা তাঁদের দরকার। তাই তাঁরা হাট বাজারে কম দামেই ধান বিক্রি করতে যাচ্ছেন।

অপর দিকে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনসাড়া, গুল্টা, রানীর হাট, নওগাঁ, গুড়পিপুল, কাটাগাড়িসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি প্রসিদ্ধ সাপ্তাহিক ধানের হাট গত তিন দিনে মোটা এবং চিকন জাতের নানা নামের ধান ভিন্ন ভিন্ন দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রি-২৯ জাতের কাঁচা – ভেজা ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০ টাকা, ব্রি-৯০ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা, ব্রি-কাটারীভোগ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২২০ টাকা, স্থানীয় জাত আব্দুল গুটি জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা। অথাৎ প্রকার ভেদে ২০ থেকে ২৫ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের নতুন বোরো ধানের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে গেছে।

ধানের দাম কম প্রসঙ্গে বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, উপজেলার সব এলাকায় হাট বাজার কেন্দ্রীক ধান ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই পাবনা, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় ধান ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দিয়ে হাট বাজার থেকে ধান সংগ্রহ করেন। আর বর্তমানে বড় বড় ধান ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধান কেনার আগ্রহ কম। অথচ প্রতিদিন হাট বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বাজার দেখছেন আর কিনছেন কম। ফলে অনেক ধান না বিক্রি করে কৃষক বাধ্য হয়ে বাড়িতেও নিয়ে আসছেন। তিনি ধান ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।

তবে স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলছেন, স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের বেশি ভাগই বড় বড় মহাজনদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে ধান কিনে তাঁদের সরবাহ করে থাকেন। কিন্তু এখন মহাজনরা ধান কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই তাঁরাও বেশি পরিমাণ ধান কিনতে পারছেন না।

এ ছাড়া স্বল্প পুঁজির কারণে স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে কৃষকের উঠান থেকে ধান কিনলেও ধানে দাম কিছু পরিশোধ করলেও কিছু বাঁকী রাখছেন এমনটি জানান, দিঘীসগুনা গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ধান দাম উঠা নামা করে। আর এখন যেহেতু সরকারী গুদামে ধান কেনা শুরু হয়েছে। তাই ভালো দামে সরকারী গুদামেই ধান বিক্রির জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button