চৌহালীসিরাজগঞ্জ

বর্ষা এলেই ভাঙ্গে নদী; ঘটে ঠিকাদারদের বাণিজ্য বহাল থাকে কঠোর সিন্ডিকেট

চৌহালী থেকে ফিরে সৈয়দ শামীম শিরাজী : বর্ষা এলেই ভাঙ্গে নদী, ভাঙ্গে জনপদ, ভাঙ্গে হাজারো মানুষের দুঃখের কপাল, কেউ হয় ভূমিহীন, কেউ হয় ভিক্ষারী, কেউ হয় জোদদারদের লাঠিয়াল, কেউ হারায় ভোটের ন্যায্য অধিকার। নদী ভাঙনে ঠিকানা হারিয়ে অনেকে হারায় নাগরিক অধিকারও। এতকিছুর পরেও জীবন যুদ্ধে অবতির্ন হয়ে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ লড়াই করে চলেছে। অথচ তাদের দেখার কেউ নেই-ক্ষোভ ও আক্ষেপ ভুক্তভুগিদের।

বর্ষা এলেই যমুনা নদী ভাঙনে বানিজ্য শুরু হয়। যে বরাদ্দ আসার শুস্ক মৌসুমে সেই বরাদ্দ আসতে আসতে আসে বর্ষা মৌসুমে। ফলে পানির ভেতর কয়টা ব্লক ফেলা হয় আর কয়টা জিও ব্যাগ/বস্তাা ফেলা হয় তার হিসাব নিকাশে নাকি থাকে অনেক ফারাগ বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। শুস্ক মৌসুমে বরাদ্দ এলে সেটা দৃশ্যমান হবে বলে বরাদ্দ আসে না,  আসে বন্যা এলে।

যমুনা নদী বেষ্ঠিত ব্রম্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের উপর ঘরবাড়ি তোলা হয় পাউবোর কর্তৃপক্ষের মতে বন্যার সময় এমনিতেই বাধ নাজুক হয়ে পরে এর উপর ঘরবাড়ি তুললে চাপ বেড়ে যায়। সেই সাথে ঘরবাড়ি হলে বাড়িতে ফসল থাকে আর এই সকল খেতে আসে ইঁদুর হয় গর্র্তের সৃষ্টি। ইঁদুরের গর্ত দিয়ে বন্যার সময়া পানি চুয়ে চুয়ে ছিদ্র বড় হয়। একসময় ঐ চুয়ে পড়া স্থান পানি প্রবেশ করে বাধ ভাঙনের পথ সুগম করে। তাদের মতে রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকায় আমরা তাদের বাধা দিয়েও ফেরাতে পারি না।

সিরাজগঞ্জের প্রমত্তা যমুনা নদী ভাঙার পাউবোর কাজের ঠিকাদারদের নাকি রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদের ক্ষমতা অনেক সময় প্রথিত। সিরাজগঞ্জ জেলার সিন্ডিকেট ঠিকাদার ছাড়া অন্য কোনও জেলা বা বিভাগের পাউবো ঠিকাদার কাজ পেলেও সিন্ডিকেটকে সালামি ঠুকে কাজ করতে হয়। লাভের গুর পিপরায় খাবে বলে ওই ঠিকাদার তাদের কাজ সিন্ডিকেট এর কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ঘটনার এখানেই শেষ নয় ওই সিন্ডিকেট প্রতিবছর নাকি কোটি টাকার বিগ বাজেটের পিকনিক করে থাকে। তাদের এই টাকার উৎস কোথায়?  জানতে প্রশ্ন করে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার ভুক্তভোগী মহল।

সিরাজগঞ্জের অপেক্ষাকৃত তরুণ ঠিকাদাররা এখন অল্প সময় কোটিপতি। রাজধানিতে তাদের অনেক গাড়ি বাড়ি হয়েছে বটে কিন্তু যমুনা নদীর ভাঙনের অবস্থা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি তাদের এতো টাকার উৎস কোথায় সুষ্ঠ তদন্ত করলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে।

নদী ভাঙনে সর্বস্বহারা। অন্যদিকে নদী ভাঙনে অধিগ্রহনকৃত জমির টাকার ষোল আনা অংশ অনেকে না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে সিরাজগঞ্জের স্বার্থসংগ্রাম কমিটি বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করার সত্বেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই কমিটির সভাপতি ডা. রাজা জানান, অনেক ভুমিহীন ও অধিগ্রহনকৃত জমির মালিক ষোল আনা টাকা এখনও বুঝে পাননি। আর কবে পাবে তাও বলা যাচ্ছে না। 

দুর্গম চরাঞ্চলে নদী ভাঙন এলাকায় চলছে বালু দস্যুদের কর্মযোগ্য। পাহাড় পরিমাণ উঁচু হয়ে নদী ভাঙন পাহাড় পরিমাণ গর্ত করে তোলা হচ্ছে বালু। ফলে নদীর ভাঙন তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকছে বলে অভিযোগ করেছে নদীকুলের এলাকাবাসী। এসব দেখেও না দেখার ভান করে রহস্যময় কারনে স্থানীয় প্রশাসক এড়িয়ে চলছে। অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ যেন মরার উপর খরার ঘা। আমাদের এই প্রতিনিধি স্বচক্ষেই এগুলো দেখেন এবং এর কারণ জানার জন্য স্থানীয় উপজেলা পরিষদের টিএনও-এর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি অফিসে জরুরি কাজ আছে অযুহাতে তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে চলে যান। ফলে এই প্রতিনিধি নিরাশ হয়ে ফিরে আসেন। এখানে সেই প্রবাদ বাক্যের কথা মনে পরে যায়, “ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খাই নাই”। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যেতে হয় এখন টাঙ্গাইল জেলার ১০০শত মাইল রাস্তা পেরিয়ে চৌহালী বিনানই গ্রামে। দুর্গম চরাঞ্চলের সে এক দুর্গম রাস্তা। গোড়ালি সমান ধুলো পেরিয়ে আর এক হাটু পরিমাণ গর্তের মাজায় ঝাঁকি খাওয়া তীব্র ব্যাথা অনুভবে এই দুর্গম পথ আধুনিক যুগেও পারি দিতে হয়। পূর্বের ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের এই রাস্তা সংস্কারের কোন ভূমিকা আছে কিনা তাহা বোধগম্য নয়। তবে তাদের বাড়ীর উঠোন ও দালানকোঠা চাকচিক্যময়তা দেখলে বোঝার উপায় নাই এটা চরাঞ্চলের দুর্গম এলাকা। তাই এলাকাবাসী তাদের উপর নাখোস। তাদের প্রশ্ন আমাদের এই পথের দুঃখ ঘুচবে কখন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button