ডা. জহুরুল হক রাজা: ডা. মমতাজুল ইসলাম নয়ন। পিতা সহকারী অধ্যাপক তসিকুল ইসলাম। মাতা মমতাজ মহল। একজন সফল গৃহনী। গ্রাম মরদানা, শিবগঞ্জ পৌরসভা, চাপাইনবাবগঞ্জ।
নয়ন ২০১১ সালে নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ সিরাজগঞ্জে এমবিবিএস এ ভর্তি হন। ২০১৬ সালে তিনি এমবিবিএস চুড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করেন। ২০১৭ সালে ইন্টার্নি করা অবস্থায় ডা. নয়নের দেহে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ এর মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে নয়নের চিকিৎসা চলে। প্রথমে রাজশাহীতে। পরে ঢাকায়। শেষে ভারতের কোলকাতার রাজারহাট টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে ডা. মেমেন চন্ডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলে।
এই দীর্ঘ চিকিৎসায় নয়নের ৮৫ ব্যাগ রক্ত লাগে। কেমোথেরাপি চলে অনেক দিন। সবশেষে নয়নের ছোট ভাই মোস্তাকুল ইসলাম কমন এর বোনম্যারো থেকে স্টেমসেল নিয়ে নয়নকে দেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে নয়ন সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।
মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে বাচতে চিকিৎসা বাবদ নয়নের পরিবারের অন ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এ ছাড়াও ভারতের একটি মুসলিম সংস্থা থেকে ৫ লাখ টাকা নয়নের চিকিৎসা বাবদ প্রদান করে। একজন চিকিৎসক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও নয়নকে বেশ ছাড় দেয়।হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মচারী নয়নকে তাদের আপন মানুষ হিসাবে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান করে।
নয়নের সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে ডা. নয়নের পরিবার ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসে। নয়নের বাবার অনুরোধে নয়নের চাচা, স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মচারী তফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে। নয়নের আত্মীয়স্বজনও নয়নের চিকিৎসায় স্বেচ্ছায় নয়নের পরিবারের পাশে এসে দাড়ায়।
ক্যান্সার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী সম্পূর্ন সুস্থ ডা. মমতাজুল ইসলাম নয়ন এখন কিডনি ফাউন্ডেশন এর খোকন মেমোরিয়াল হাসপাতাল শাখা, আলোকদিয়ার,কামারখন্দে মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে সুনামের সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করছে।
ডা. নয়ন ২০২৪ এর মার্চে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে এম ফিল কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে সেই কোর্সে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ডা. নয়ন।
নয়নের ছোট ভাই কমন এখন বুয়েটে ই,ই,ই, বিভাগে পড়াশোনা করছে। ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী আমার প্রিয় সাবেক ছাত্র ডা. নয়ন ও তার পরিবারকে প্রানঢালা অভিনন্দন।
কোলকাতার টাটা মেডিক্যাল সেন্টার এর চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মেমেন চন্ডিসহ ওই হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এছাড়া ভারতের যে সমস্ত সংগঠন নয়নকে রক্ত দান করে, অর্থ দিয়ে কিংবা নানাভাবে সহায়তা প্রদান করে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানায় নয়ন ও তার পরিবার। লেখক: ডা. জহুরুল হক রাজা, সভাপতি বিএমএ সিরাজগঞ্জ।