শাহজাদপুরসিরাজগঞ্জ

বাঘাবাড়ি-চট্টোগ্রাম ও মঙ্গলা নৌরুটে নাব্যতা সংকট

নাব্যতা কাটাতে প্রয়োজন নৌ ড্রেজিং, ১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশে প্রয়োজন বাঘাবাড়ি নৌবন্দরকে প্রথম শ্রেণির বন্দরে রূপান্তর

স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দর-চট্টাগ্রাম ও মঙ্গলা নৌবন্দর রুটের পদ্মা,মেঘনা,যমুনা ও বড়াল নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই অস্বাভাবিকহারে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে ডুবচর জেগে উঠেছে। ফলে চট্টাগ্রাম ও মঙ্গলা নৌবন্দর থেকে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরগামী রাসায়নিক সার,কয়লা,পাথর,সিমেন্ট ও জ্বালানী তেলবাহী কার্গো-জাহাজ পুরোলোড নিয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে যেতে পারছে না। ফলে পাটুরিয়া ও নগরবাড়ির আগেই লাইটারেজের মাধ্যমে জাহাজ থেকে অর্ধেক মাল আনলোড করে বেড়া, নগরবাড়ি ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস করছে।

অপরদিকে নগরবাড়ি,বেড়া ও যশোরের নওয়াপাড়ায় থেকে ১০ চাকা অথবা ১৬ চাকার ট্রাকে করে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামে সার এনে এরপর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে মহাসড়কের ক্ষতির পাশাপাশি সঠিক সময়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে আসন্ন সেচ মৌসুমের আগে ইরি-বোরো আবাদের জন্য চাহিদা অনুযায়ী রাসায়নিক সার মজুদে বিঘ্ন ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আশংকা রয়েঝে।  এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে কৃষকরা অবিলম্বে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এ নৌরুটের ডুবচর গুলি অপসারণ করে সঠিক মাত্রার ড্রাফট ফিরিয়ে আনতে বিআইডব্লিউটিএ এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে কর্মরত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের চরাচিথুলিয়া গ্রামের কৃষক সোহেল মোল্লা,আব্দুল আলিম ফকির,রেশমবাড়ি গ্রামের ফিরোজ হোসেন,বৃ-আঙ্গারু গ্রামের শামীম হোসেন,পোতাজিয়া গ্রামের আজম আলী জানান,সঠিক সময়ে সার মজুদ না হলে উত্তরাঞ্চলে রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা দূর করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর দাবী জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের শ্রমিক আলমগীর হোসেন, ওমর ফারুক ও জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ডুবচর ও নাব্য সংকটের কারণে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় তাদের শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এদিকে গত ১৫ দিন পর বুধবার দুপুরে একটি সারবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে কিছু সময়ের জন্য বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। শ্রমিকরা কাজ পেয়ে উল্লসিত হয়ে ওঠে। কাজ শেষ হলে বন্দর হারিয়ে ফেলে কর্মচাঞ্চল্য।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন,চর নাকালিয়া,পেচাকোলা,মোল্লার চর,ব্যাটারির চর,পাটুরিয়া,নিকলি এলাকায় নদীর পানির নাব্য কমে যাওয়ায় অনেক ডুবচর জেগে উঠেছে। ফলে পুর্ণলোডে পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে আনা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর জাহাজ শুন্য হয়ে অচল হয়ে পড়েছে। তিনি এ সমস্য সমাধানে দ্রুত নৌ ড্রেজিং করতে বিআইডব্লিউটিএ এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর লেবার এজেন্ট আবুল সরকার বলেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাঘাবাড়ি ঘাট ইজারা নিয়েছি। জাহাজ না আসায় আমাদের লেবার বেকার হয়ে পড়েছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনিও এ নৌপথ সচল করতে বিআইডব্লিউটিএ এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের নৌ পথে কোন নাব্য সংকট নেই। এখানে ৮ থেকে ১০ ফুট পানির ড্রাফট রয়েছে। তিনি বলেন, এটা দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর। ফলে এ বন্দর চ্যানেলে নিয়ম অনুযায়ী ৭ থেকে ৮ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা। নিয়ম অমান্য করে সেখানে ১০/১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ নিয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই। তিনি আরও বলেন, এ বন্দরটি প্রথম শ্রেণিক বন্দরে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামের ইনচার্জ হারুন আর রশিদ বলেন, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে জাহাজ না  এলেও বাঘাবাড়িসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে ইরি-বোরো আবাদের জন্য আপদকালীন সার মজুদের কাজ পুরোপুরি ভাবে চলছে। ট্রাকযোগে সার পরিবহণ করা হচ্ছে। ফলে আসন্ন সেচ মৌসুমে সার সংকটের কোন সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে কৃষকদের আতংকিত না হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে অবস্থিত পরিবহণ ঠিকাদারের অফিসের কেউ কথা না বলায় তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button