রুবাইয়া জাহান রিপা : চা বাগানের কথা উঠলেই মনে হয় সিলেট বা চট্টগ্রামের কথা। উঁচু-নিচু সবুজে ঘেরা টিলা আর পাহাড় তার গাঁয়ে সারি সারি চা গাছ। কিন্তু সমতল ভূমিতে ও যে চা বাগান হতে পারে তাপঞ্চগড় না এলে বোঝা যাবেনা। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে গড়ে উঠেছে এমন অর্গানিক চায়ের প্রাণ জুরানো সবুজ বাগান। এ দেশে অর্গানিক ও দার্জিলিং জাতের চায়ের চাষ হয় তেঁতুলিয়ার বাগান গুলোতেই।
হিমালয় কন্যা খ্যাত সবুজ শ্যামলে ঘেরা দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে । ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড়ে সফরে এসে চা চাষের স্বম্ভাবনার কথা বলেন। এরপর থেকেই পঞ্চগড়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রবিউল ইসলামের চেষ্টায় স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয় চা চাষ। প্রথমে টবে পরে জমিতে চাষের চাষ করা হয়। সে সফলতা থেকে পঞ্চগড়ে বানিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদন করা হয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প ইউনিট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি ইউনিট বিশেষজ্ঞ দল পঞ্চগড়ে ও ঠাকুরগাঁও জেলায় জরিপ চালিয়ে চা চাষের স্বম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এবং ৪০,০০০ একর জমি চা চাষের স্বম্ভাবনা নির্ধারণ করেন।
২০০০ সালে সর্বপ্রথম তেঁতুলিয়া টি কোম্পানী লিমিটেড এবং কাজী এন্ড কাজী চা বাগান বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ শুরু করেন।বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্মকর্তাদের পরামর্শে পঞ্চগড়ে জেলায় সর্বপ্রথম চা চাষ শুরু করেন জনাব মোঃ ইসহাক আলী মন্ডল, জনাব মোঃ আব্দুর রহমান, জনাব আমেনা খাতুন সহ্ ছয় থেকে সাতজন ক্ষুদ্র চাষী চা চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ক্ষুদ্র প্রান্তিক পর্যায়ে চা চাষ শুরু হলেও পরবর্তীতে ২০০৭ সালে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারি জেলায় চা চাষ শুরু হয়। অবশেষে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এসে বাংলাদেশ চা বোর্ড’ নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্প হাতে নেয়।তেঁতুলিয়া উপজেলায় সফলতার পর পঞ্চগড়ে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে বিস্তার লাভ চা বাগান।
গত বছর ২০২২ সালে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি। যা বিগত বছরের তুলনায় ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি বেশি উৎপাদনে সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছন চা বোর্ডের জেলা আঞ্চলিক কার্যালয়। চা বোর্ড জানায়, উত্তরাঞ্চলে বেড়েছে চা আবাদ। এবার ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর সমতল ভূমিতে ৩০ টি বাগান ও ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র চা বাগান থেকে চা উৎপাদন হয়ে রেকর্ড ছাড়িয়েছে গেছে। এ বছর এসব বাগান থেকে ৯ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৩২ কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা উত্তোলন করা হয়। যা জাতীয় উৎপাদনের ১৮.৯২ শতাংশ।
প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৬ সহস্রাধিক ক্ষুদ্র চা চাষি রয়েছে। তন্মধ্যে ১১৬০ জন ক্ষুদ্র চাষি নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় নিবন্ধিত। উক্ত চাষিরা প্রকল্প থেকে স্বল্পমূল্যে চা চারা, কৃষি ইকুইপমেন্ট যথা- প্রুনিং নাইফ, স্প্রে মেশিন, হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে চা আবাদের ফলে তারা উপকৃত হচ্ছেন।
চা বোর্ড সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া চাষীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতে ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ’ স্কুলের মাধ্যমে কর্মশালা করা হচ্ছে। চাষিদের সমস্যা সমাধানে ” দুটি পাতা একটি কুঁড়ি” নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরী স্থাপন করা হয়েছে।
পরিশেষে, এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে উত্তরের সমতল ভূমিতে চা বাগান। বাড়ছে উৎপাদন। বাড়ছে আয়। দেশের অর্থনীতিতে দিনে দিনে অবদান রাখছে উত্তরের সমতলের চা বাগান।