আসন্ন পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির সময়ে “শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা” সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গত ১৪ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনের আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশন (এনএডিপি) এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সংস্থার নির্বাহী প্রধান সদরুল হাসান দেশের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।
এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান যায়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও ইনজ্যুরি সমীক্ষা, ২০১৬ অনুসারে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫ বছরের কম বয়সী ৩০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের হিসেবে ধরলে প্রায় ৪০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটে থাকে বাড়ির নিকটতম জলাধার যেমন পুকুর (৬৬%), উন্মুক্ত জলাধার (১৬%) যা ঘর থেকে গড়ে প্রায় ৪০ কদম দূরে। এই অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর প্রায় ৬০ শতাংশ ঘটে থাকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে সে সময় পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মায়েরা প্রাত্যহিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। অর্থাৎ এই সময়টাতে শিশুদের বিশেষ করে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুদের দেখভাল করার সার্বক্ষণিক কেউ থাকে না। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে সামগ্রিক ভাবে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।
লিখিত বক্তব্যে আরও তুলে ধরা হয় যে, মুসলমান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ উল ফিতর আসন্ন। ঈদ উল ফিতর ও মে দিবস উপলক্ষে শহরের কর্মজীবী মানুষেরা ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। আগত এই ঈদের ছুটি কাটাতে শহরের অধিকাংশ মানুষ নাড়ীর টানে গ্রামে যাবেন। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অনেক শিশুই সাঁতার জানে না অথচ ছুটির সময়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানোর একটা অন্যতম আকর্ষণ হলো উন্মুক্ত জলাধারে (পুকুরে বা খালে-নালায়) গোসল করা। এই সময়ে প্রয়োজন শিশুদের অধিকতর পরিচর্যা (সুপারভিশন) করা এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরে রাখা। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক মানুষের জীবনধারা পাল্টে যাচ্ছে এবং লক্ষণীয় যে বর্তমানে অধিকতর মানুষ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বিশেষ করে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়। বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে গণমাধ্যম মারফত পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংবাদে আমরা শোকার্ত হয়েছি; আমরা চাই না এ বছর ঈদ ভ্রমণে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশন (এনএডিপি) এর পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে দেশের সকল ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ও সাধারণ জনগণ যারা আসন্ন ঈদের ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদেরকে নিজ নিজ সন্তানদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে বিশেষ সতর্কতা ও নজরদারি বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে প্রতি বছর সারা দেশের প্রায় ৮৭.৮ লক্ষ মানুষ নৌ পথে যাতায়াত করেন। উল্লেখ্য, স্বল্প সময়ে ব্যাপক মানুষ ঈদের ছুটি কাটাতে নিজ নিজ জন্মস্থান কিংবা পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নৌ পথে চলাচল করে থাকেন। আমাদের নৌ পথে চলাচলের বর্তমান সীমিত ব্যবস্থা এ ধরনের উৎসবমুখর সময়ে ব্যাপক মানুষকে নিরাপদে নৌ চলাচলের যথাযথ সেবা প্রদানে অপ্রতুল। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য থেকে আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে উৎসবমুখর মানুষদের নৌ পথে ভ্রমণ আরো নিরাপদ ও আনন্দময় করার আহ্বান জানাচ্ছি। ঝড়বৃষ্টি বিশেষ করে কালবৈশাখি ঝড়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে লঞ্চ পরিচালনা নির্বিঘ্ন করতে লঞ্চ মালিক পক্ষকে এবং যাত্রী সাধারণকে আবহাওয়ার বিষয়ে জেনে নৌ পথে চলাচল করতে অনুরোধ করছি।
লিখিত বক্তব্যে সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দময় করার উদ্দেশ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নিরসল কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের উল্লেখ্যযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র যেমন কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটায় পর্যটকদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সহযোগী সংস্থা সমূহের কার্যক্রম সীমিত।
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্থাটি পর্যটকদের পানিতে ডুবা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জোর সুপারিশ জানান।