দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ। শ্রেণিকক্ষ ও ভবনের চারপাশে জাতীয় ফলমুল, দেশ-প্রকৃতি, ছোটদের মিনা কার্টুনসহ মণীষীদের ছবি। সদরের প্রাথমিক স্কুলগুলো শিশু পরিবেশ বান্ধব হয়ে উঠছে। স্কুলগামী শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে
শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন ও মেরামতের টাকায় রঙিন করে তোলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার ছোঁয়া লেগেছে সদরের সকল স্কুলে-স্কুলে। স্কুলের প্রবেশ মুখ ও দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ। শ্রেণিকক্ষ ও ভবনের চারপাশে জাতীয় ফলমুল, দেশ-প্রকৃতি, ছোটদের মিনা কার্টুনসহ নানা মণীষীর ছবি। এমনিভাবেই রঙ-তুলির আঁচড়ে স্কুলগুলোকে শিশুবান্ধব করার সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোট বেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে, জানছে দেশ-প্রকৃতি সমন্ধে। অপরদিকে বেশি করে স্কুলগামী হচ্ছে কমলমতি শিশুরা।
সরেজমিন বিভন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোকে রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রঙ তুলির ছোঁয়ায় বিদ্যালয়গুলো এখন যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। পর্যায়ক্রমে সব স্কুলের আঙিনায় স্থাপন করা হচ্ছে শহীদ মিনার। অনেক বিদ্যালয়ের দেয়াল যেন রংধনুর সাতরঙে রাঙানো। মাঝে মাঝে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আঁকা ছবি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশের আগে এসব ছবির মণীষীদের সাথে পরিচিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চারু শিল্পীরা দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছেন ছোটদের মিনা কার্টুন, ফুল-ফল ও পশু-পাখির ছবি। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে নানা ধরণের নীতিবাক্য। কোথাও পাশেই দাঁড়িয়ে গভীর মনযোগ সহকারে ছবি আঁকা দেখছে শিশু শিক্ষার্থীরা। ৫২ সপের পরিচালক চারু শিল্পী এস এইচ মুরাল বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে পড়াশনার মান উন্নত হচ্ছে। স্কুল গুলো নানা রং এ সর্জ্জিত হওয়ায় কমলমতি শিশুদের বেশি বেশি স্কুলে আসতে দেখা যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ২৪৬ টি স্কুলে মধ্যে ১৯৮টি স্কুলে এমন আঁকিবুঁকির কাজ করা হয়েছে। সরকারি স্লিপফান্ডের টাকা ব্যয়ে পর্যায়ক্রমে সকল স্কুলে এমন কাজ করা হবে বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল মন্ডল জানান, শিশুদের শৈশবকে আক্ষরিক অর্থেই সাতরঙা করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে সিরাজগঞ্জ জেলার ১ হাজার ৬৭২টি বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাইয়ার সুলতানা জানান, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিইডিপি -৪ এর আওতায় (স্লিপ ফান্ড) থেকে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছে। তাছাড়া ছোট খাট মেরামতের জন্য অনেক বিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েছে। এ টাকায় সদরের সকল স্কুলে শিশুবান্ধব করার কাজ চলছে। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে স্কুলগুলোর ভিতরে বাইরে সংস্কার চলছে, রঙ- তুলির কাজ চলছে। বিবর্ণ, মলিন স্কুলগুলো হয়ে উঠছে ঝকঝকে।
মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতারী খানম জানান, সুন্দর মন, সুস্থ পরিবেশ খুব বেশি প্রয়োজন। স্কুলের পরিবেশ সুন্দর হওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিশুরা বেশি করে স্কুলমুখী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আনন্দের সাথে পড়াশোনা করছে তারা। এমন উদ্যোগে শিক্ষকরাও উদ্দীপ্ত।
বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী ফারজানা, মৌ, হাবিব, ইসমাই বলছিল, ‘এখন স্কুলে এসে আর বিরক্ত লাগে না। সাজানো গেছোনো বিদ্যালয়, এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের। একই সাথে এ স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে আমরা খুব খুশি। এখন স্যাররা যতক্ষণ ছুটি না দেয় ততক্ষন আমরা স্কুলে থাকি। স্কুল সুন্দর হয়েছে তাই আর স্কুল পালাতে ইচ্ছে করে না বলে তারা জানায়।
স্কুলকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলায় স্কুলের প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন কয়েক জন অভিভাবক। আনিসুর নামে এক অভিভাবক জানান, কিছুদিন আগেও মিরপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি ছিল ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি পড়ত শ্রেণিকক্ষে। এখন স্কুলটি নানান রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সাজানো হয়েছে গোটা স্কুল প্রাঙ্গণ। আর এতে শিশুরা নিজ উদ্যোগেই স্কুলে যাচ্ছে।
উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ফরিদ আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্কুলমুখী করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্কুলে এমন পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে আনন্দ পাবে। পড়াশোনায় মনযোগী হবে এবং ঝড়ে পড়া রোধ হবে।
সিরাজগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি উদয় কুমার পাল জানান, সরকারি অর্থায়নে স্কুলগুলোকে স্মার্ট স্কুলে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। স্কুলগুলোতে ভিন্নতাও আসছে বলে তিনি জানান। স্কুলগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করতে দেয়ালে নানা রঙের রং তুলি, ছবি ও কার্টুন আঁকা হয়েছে। যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হয়। শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠ দান করানো হচ্ছে। এতে শিশুদের এক ঘেয়েমি বা বন্দীদশা থাকছে না। স্কুলগুলো হয়ে উঠেছে শিশুদের জন্য আনন্দমুখর।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক সমিতি সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আমিনুর ইসলাম জানান, বিদ্যালয়কে রঙিন করলে একদিক থেকে যেমন বিদ্যালয়টি দৃষ্টি নন্দন হচ্ছে তেমনি শিশুদেরকেও আকর্ষণ করছে। বিদ্যালয়ে এখন শিশুরা আসে আনন্দ চিত্তে। তিনি জানান, স্বপ্নের কোনো শেষ নেই। স্বপ্নের মতো করে রঙিন সাজে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সাজানো হচ্ছে। এতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে শিশুরা। অল্প দিনের মধ্যেই হয়তো পুরো জেলার স্কুলগুলো এভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।