তাড়াশসিরাজগঞ্জ

তাড়াশে বাঘমারা বিলে পদ্মফুলের অপরূপ হাতছানি

মনিরুল ইসলাম তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বাঘমারাবিলসহ কয়েকটি মাঠে ফুটেছে জলজ ফুলের রানী পদ্মফুল। ভাদ্রের মাঝামাঝি সময়ে কলি থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়ে এখন তা চলমান রয়েছে। শীতের আগমনী পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জলজ উদ্ভিদ গবেষকরা।

তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের শাকুয়াদিঘী বাঘমারা বিল, সদর ইউনিয়নের সোলাপাড়া, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের দোবিলা ও ঘরগ্রামের মাঠে ফুটেছে পদ্মফুল। শুধু তাই নয় পার্শবর্তী গুরুদাসপুর উপজেলায় একটি মাঠ শুধু পদ্মফুলের অভায়রন্য। আর পদ্মবিলের প্রতিদিন পদ্মফুল দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।

তাড়াশ উপজেলার সোলাপাড়া গ্রামের দুলাল চন্দ্র জানান, আমার জমিসহ পাশের অন্যও জমিগুলোতে হাজার হাজার গাছ ও পদ্মফুল ফুটছে। দেখতে যেন এক অপরুপ দৃশ্য।

তিনি আরও বলেন, পদ্মফুলের সৌন্দর্যে অনেক লোকজন আসে দেখতে। আবার কেউ কেউ কোমর পানি ডিঙিয়ে ফুল তুলে নিয়ে যায়।

তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের শাকুয়াদিঘী গ্রামের শাহিন আলম জেসিন জানান, বাঘমারা বিলে চারদিকে পদ্মফুলের অভ্যয়রন্য। দেখত যে কত সুন্দরতা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের এই বিলে পদ্মফুল দেখতে প্রতিদিন মানুষজন আসেন। পুরো বিল জুড়ে পদ্মফুল ফোটায় মনোরম দৃশ্যও অবতরণ হয়েছে।

জানা যায়, এককালে চলনবিলে হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ পাওয়া যেত। বিলের বিভিন্ন প্রান্তরে ফুটে থাকতো শাপলা ও পদ্ম। পদ্ম ফোটার সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মানুষকে আবেগ তাড়িত করত। বিলের মানুষ পদ্মপাতায় ভাত খেত। হাট থেকে লবণ, জিলেপি ও গুড় পদ্ম পাতায় মুড়িয়ে নিয়ে আসত। বিলের জলাধার দিনের পর দিন কমতে থাকায় ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পদ্মফুল জন্মে। এগুলোকে বৈশিষ্ট্য অনুসারে দুটি প্রজাতিতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এশিয়ান বা ইন্ডিয়ান পদ্ম, অন্যটি হচ্ছে আমেরিকান বা ইয়োলো লোটাস। এশিয়ান পদ্ম আবার দুই রঙে দেখা যায়, একটি মসৃণ সাদা অপরটি হালকা গোলাপি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ জানান, প্রায় চার দশক পরে চলনবিলে পদ্ম ফিরে এসেছে। পদ্ম একটি বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। পদ্মফুলের একটি পরিপক্ষ বীজ এক হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। অনুকূল পরিবেশ পেলে সে আবারও বংশ বিস্তার করে থাকে। চলনবিলে ফোটা পদ্মের ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে। চলনবিলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন নামে ১ হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল। এসব বিলে পদ্ম, শাপলা, মাখনা, সিঙ্গট,গেচু, চেচুয়া, ভাতসোলা সহ বহু প্রজাতির সপুষ্পক,ফার্ন, মস ও শৈবাল পাওয়া যেত। এরমধ্যে অনেকগুলোই বিপন্ন এবং বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button