জাতীয়

বর্তমান সময়ে বজ্রপাত এক আতঙ্কের নাম

আশিক আহমেদ

বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক ভাবে ভয়াবহ এক আতংকের নাম “ বজ্রপাত ”। সাধারণত বৃষ্টির সময়ে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। বজ্রপাতে প্রতিবছর অনেক মানুষের অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ঘটে। শুধু তাই নয়, বজ্রপাত এ প্রচুর গবাদি পশু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে থাকলেও বর্তমানে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে হতাহতের খবর শোনা গিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতিবছর বজ্রপাত এ প্রায় দেড়শো থেকে দুইশোড় মতো মানুষ মারা যান। এর বেশিরভাগ ঘটে হাওর অঞ্চলে।

বজ্রপাত কি?

আমরা স্থানীয় বা গ্রাম্য ভাষায় যাকে ঠাটা বলি তাই বজ্রপাত। আসুন জানার চেষ্টা করি কেন কিভাবে এর সৃষ্টি হয়। বায়ূমন্ডলের উপরের অংশে নিচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে।এ কারনে অনেক সময় দেখা যায় যে,নীচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়।এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড (Thunder Clouds) বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘে ও ছোট ছোট পানির কনা থাকে।আর উপরে উঠতে উঠতে পানির পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে।এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে পানির পরিমান যখন ৫ মিঃমিঃ এর বেশি হয়,তখন পানির অনুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পাড়ে না।তখন এরা আলাদা (Disintegrate) হয়ে যায়, ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের (Electric Charge)এর সৃষ্টি হয়। এ কারনেই বৈদ্যুৎ এর সৃষ্টি হয়। প্রতিটি আঘাত ১ বিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ শক্তি বহন করার ক্ষমতা রাখে। কিছু প্রকার বজ্রপাত মেঘের মধ্যেই থাকে। সেগুলি মেঘের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজ করে। আর কিছু ভাগ রয়েছে যেগুলির ফলে দাবানল সৃষ্টি, অগ্ন্যুৎপাত তৈরি ও তুষার ঝড়ের কারণ হতে পারে।

এ ধরনের বজ্রপাতে প্রান হানিও ঘটে থাকে। বাচার জন্য এ থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। এজন্য নানা ধরনের প্রন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। আগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃতের ঘটনা অনেক বেড়েছে। কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনায় মৃতের সংখ্যা কমানো সম্ভব। যেমন-

২. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক স্থাপন নিশ্চিত করন।

৩. খোলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান।

৪. কোনও বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।

৫. খোলা জায়গায় কোনও বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। গাছ থেকে চার মিটার দূরে থাকতে হবে।

৬. ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচ থেকে নিরাপদ দূতত্বে থাকতে হবে।

৭. ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প¬াগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।

৮. বজ্রপাতে আহতদের বৈদ্যুতিক শকে মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে।

৯. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এই সময়ে আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করুন।

১০. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।

১১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।

১২. ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন।

১৩. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।

১৪. বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।

১৫. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।

১৬. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।

১৭. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।

১৮. বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।

১৯. বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে অবস্থান করলে, গাড়ির থাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটিকে নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।

২০. বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।

পরিশেষে ,বজ্রপাতের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে বেশি বেশি তাল গাছ লাগাতে হবে। এই বিষয়ে সিরাজগঞ্জের একমাত্র পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন “ক্লিন সিরাজগঞ্জ গ্রীন সিরাজগঞ্জ” কাজ করে যাচ্ছে।

লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী, চেয়ারম্যান ক্লিন সিরাজগঞ্জ গ্রীন সিরাজগঞ্জ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button