স্টাফ রিপোর্টার : নানা আয়োজনে ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস এবং বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, সংগীত পরিবেশন, আলোচনা সভা ও বিজয় শোভা প্রদর্শন এবং কলেজ প্রাঙ্গণে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়।
সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ চত্বরে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন – সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বীরমুক্তিযোদ্ধা কে.এম. হোসেন আলী হাসান।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. ইসহাক আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু ইউসুফ সূর্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস, বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী সোহরাব আলী সরকার, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই তালুকদার, বীরমুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাগত বক্তব্যে রাখেন – মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ টি.এম. সোহেল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন -বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল ইসলাম জগলুল এবং বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সুবর্ণা লায়লা।
আরও বক্তব্যে রাখেন – সিরাজগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ সকল বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং সন্মানিত অতিথিদের আগমনে কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এবং রোভার স্কাউটস গ্রুপ সদস্যরা গোলাপ ফুল অতিথিদের হাতে তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। কলেজের সাহিত্য -সাংস্কৃতির ক্লাবের সদস্যদের পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এসময়ে পুরো অনুষ্ঠানে – সিরাজগঞ্জের সকল বীরমুক্তিযোদ্ধারা, জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ,অধ্যাপক সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, প্রভাষক, অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, শিক্ষার্থীগণ, কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংস সিরাজগঞ্জ জেলা কমান্ড কাউন্সিল এর সভাপতি কিবরিয়া হাসান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা, সুধীজন গুনীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ চত্বরে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্তদিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বীমুক্তিযোদ্ধারা প্রতীক স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০ ডিসেম্বর থেকে সিরাজগঞ্জে পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভাঙতে শুরু করে। তাদের সহযোগী তথাকথিত শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনী ও আল বদরদের সহযোগীরাও সীমাবদ্ধ হতে থাকে। ১৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং স্থল ও নৌপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পাক হানাদারদের দখলে থাকে একমাত্র রেলপথ।
সিরাজগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আমির হোসেন ভুলু, প্রয়াত ইসমাইল হোসেন, পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, যুদ্ধকালীন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার প্রয়াত লুৎফর রহমান অরুন, গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, কোম্পানী কমান্ডার ও পান্না বাহিনীর প্রধান প্রয়াত টিএম শামীম পান্নাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জের রেলওয়ে ঘাট, যমুনা নদীর তীর এলাকা, কাজিপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সমবেত হন। এ সময় পাক হানাদার তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য সিরাজগঞ্জ ছেড়ে ট্রেনযোগে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী বাহিনীও রেকি করতে পাঠানো হানাদারদের পালিয়ে যাবার খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। পরে জয় বাংলা ধ্বনি ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে শহীদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দেশ গঠনের শপথ নেন।এখানে প্রয়াত আমীর হোসেন ভুলুকে মুক্তিবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক ও ইসমাইল হোসেনকে প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জ শহর থেকে পাক হানাদারদের পালিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেলকুচি, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, চৌহালী, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর থানা এলাকাসহ অন্যান্য এলাকা হানাদার মুক্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ওয়াপদা অফিসে পাকবাহিনীর মূল ক্যাম্প দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওইদিন কওমী জুটমিল, মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।