তাড়াশসিরাজগঞ্জ

রাতের আঁধারে বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন স্বজনরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে যত্নে রাখার কথা যাদের, হয়ত তারাই রাতের আঁধারে ফেলে রেখে গেছেন বৃদ্ধাকে। কিছু জানতে চাইলে কেঁদে ওঠেন বার বার। ধারণা করা হচ্ছে তার নিজ সন্তান অথবা নিকট আত্মীয়েরাই তাকে অসুস্থ অবস্থায় মাজারের রাস্তায় ফেলে গেছেন। ছুফিয়া খাতুন নামে এক নারী তার দেখাশুনা করেন।      

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ.) এর মাজার শরীফ এলাকাতে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে রয়েছেন নাম পরিচয়হীন এই বৃদ্ধা। স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৃদ্ধার আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এতদিনেও স্বজনদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নওগাঁ মাজার এলাকার বাসিন্দা ও মুদি দোকানী শহীদুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজেও বৃদ্ধার ছবি ও ভিডিও  ফেসবুকে দিয়ে বৃদ্ধার আত্মীয়দের খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।

নওগাঁ মাজারের মুহতামিম (পরিচালক) আব্দুল হাই সরকার বলেন, রাস্তা থেকে উঠে এসে বেশ কিছুদিন মাজার চত্বরের গাছ তলায় ও মাদরাসার বারান্দায় থেকেছেন বৃদ্ধা। পরে মাজারের ভেতরের রাস্তার পাশে কয়েকটি পুরানো টিন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, অসহায় বৃদ্ধাকে দেখশুনা করেন নওগাঁ গ্রামের হামিদের স্ত্রী ছুফিয়া খাতুন। তাদের ভাতের হোটেল রয়েছে। হোটেল থেকে ভাত এনে খাওয়ায়। মাঝে মধ্যে গোসলও করিয়ে দেন।

ছুফিয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলে মেয়ে নেই। আত্মীয় স্বজনও নেই বললেই চলে। কেউ নিজের মা-বাবাকে বাড়তি মনে করে রাস্তায় ফেলে যায়। আবার কেউ না পেয়ে আপসোস করে। বছর চলে যায়, সব রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগও ফেলে যাওয়া বৃদ্ধার শরীরের ওপর দিয়েই বয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাজার এলাকার যে জায়গাতে বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছে, সে খুপড়ির সামনের অংশে কোনও বেড়া নেই। লোকজন কাপড় টাঙিয়ে দিয়ে একটু আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন মাত্র। বৃদ্ধার পেট একদম পিঠের সাথে লেগে গেছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন পেট ভরে খেতে পায়নি। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে মানুষটি শুয়ে আছেন। প্রখর রোদে তার শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে।

ঢাকা গাজীপুরের বয়স্ক পূনর্বাসন কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে ওই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী রবিউল ইসলাম বলেন, তারা সাধারণত যাদের পূনর্বাসন করে থাকেন, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। যা এই বৃদ্ধার নেই।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, মাজারের মুহতামিমের সঙ্গে কথা বলে আপাতত বৃদ্ধার থাকার জায়গাটা নিরাপদ করা হবে। বৃদ্ধার জন্য আরও কী করা যায় ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button