সিরাজগঞ্জ

রাজশাহী বোর্ড এ প্রথম স্থান অর্জন করেও কলেজে ভর্তি হতে পারছে না সিয়াম

বিজয় আহমেদ সাগর: এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে রাজশাহী বোর্ড এ প্রথম স্থান অর্জন করেও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না মো. সিয়াম হোসেন। বয়রা ভেন্নাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বাণিজ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সিয়াম।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বিনুয়পুর (পশ্চিম পাড়া) গ্রামের মো. দুলাল আকন্দ এর ছেলে সিয়াম হোসেন। বাবা পেশায় একজন কৃষক। তার সামান্য আয় দিয়েই চলে ৩ ভাই আর বাবা-মা নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার। নিজস্ব সামান্য জায়গার ওপর কোনোভাবে খুপরিতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে তাদের জীবন।

সিয়ামের বাবা এখন অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারেও দেখা দিয়েছে টানপোড়ন। সিয়াম পরিবারের বড় হওয়ায় তার উপরেই এসে পড়েছে সংসারের ৫ সদস্যের দায়িত্ব। তবুও সে পড়তে চায়। তার কলেজে ভর্তি হতে প্রয়োজন অনেক টাকার। কিন্তু গরিব বাবার পক্ষে এককালীন অনেকগুলো টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাই কলেজে ভর্তি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে নিরবের পরিবার।

প্রতিদিন সকাল-বিকাল বাবার কাজে সাহায্য করে সে। এভাবে কাজের ফাকে ফাকে লেখাপড়া করে এসএসসিতে পেয়েছে গোল্ডেন এ প্লাস’। শুধু গোল্ডেন প্লাসই নয় বাণিজ্য বিভাগ থেকে রাজশাহী বোর্ড এ প্রথম স্থানও অর্জন করেছে সিয়াম। কিন্তু টাকার অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধের পথে। সে ভর্তির জন্য কলেজ চয়েসে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজসহ ৫টি কলেজ চয়েস করে অনলাইনে আবেদন করে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ এর সুনাম শুনে সেটাই প্রথম চয়েস দিলে সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু সেখানে ভর্তি হতে হোস্টেল খরচসহ এককালীন অনেকগুলো টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে কিছু টাকা সাহায্য পেলেও পর্যাপ্ত টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

সিয়াম বলে, দরিদ্র পরিবারে জন্ম, করার কিছু নেই। বাবা কৃষি কাজ করে একা সামলে উঠতে পারেন না। তাই তার কাজে সাহায্য করেও আল্লাহর রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল এসেছে। আমার স্বপ্ন ছিলো ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। সেটাতো হলো না। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্বাচন করেছিলাম। কিন্তু প্রয়োজন অনেকগুলো টাকার। সেটা আবার বাবা জোগাড় করতে পারছে না। কী হবে জানি না। এক বছর নষ্ট হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

সিয়ামের বাবা দুলাল আকন্দ বলেন, ‘কৃষি কাজ করে ৫ জনের সংসার চলে। তার উপর আবার শরীরও ভাল না । সিয়াম আমাকে কাজে সাহায্য করে ভাল রেজাল্ট করেছে। আমাদের ৫ জনের সংসার ঠিক মতো চলে না। ওকে পড়াবো কীভাবে? কোনও দানশীল ব্যক্তি যদি তার লেখা পড়ার ভার বহন করে, তবে কৃতজ্ঞ থাকবো। তাহলে সে পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারবে।’ কেউ সহায়তা করতে চাইলে এই নম্বরে ০১৭৬৬-৪০৪৭৯২, ০১৩০৬-৮৯৮৬৪৩ যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন সিয়ামের পরিবার।

বয়রা ভেন্নাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক বলেন, সিয়াম ছোটবেলা থেকেই মেধাবি ও পরিশ্রমী। ক্লাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরিবারের অভাব-অনটন তাকে দমাতে পারেনি। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমাদের স্কুল থেকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি। সে বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক অনেক বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন হবে। সেজন্য প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবান মানুষরা এগিয়ে না আসলে সিয়ামের মতো একজন মেধাবী ছাত্রকে আমরা হারাবো।

ইতিমধ্যে এ বিষয়ে এনডিপির শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির উপব্যবস্থাপক শিপন চন্দ্র নাগ সহয়তা প্রদানে সিয়াম হোসেন এর সাথে আলোচনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button