সদরসিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে প্রথম নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মামা ভাগ্নে এগ্রো

এনডিপি প্রতিনিধি: বর্তমানে দেশে এবং দেশের বাইরে ক্রমেই হিমায়িত মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন বৃদ্ধি, কর্মব্যস্ততা, একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি, আর্থিক সচ্ছলতা, খাবারের স্বাদে বৈচিত্র আসা, নিরাপদ মাংস ক্রয়ের সুযোগ ইত্যাদী কারণে হিমায়িত মাংসের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মাংস বিক্রয়ের জন্য বাজারে জবাইকরা প্রানি কখনও পরীক্ষা করা হয় না, এ ধরণের পদ্ধতি বা নিরাপদ মাংস বিষয়ে কসাইদের ধারণা/জ্ঞান কম। ফলে মাংস ও কসাই থেকে ভোক্তার মাঝে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। দেশের ৯৫ শতাংশ বাজারে প্রানি জবাইয়ের নিদিষ্ট স্থান/জবাইখানা ও বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। যত্রতত্র প্রানি জবাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিবেশ দূষণ বাড়ছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলাতেই কমপক্ষে ৩০ টি স্থানে যত্রতত্র পশু জবেহ হয় এবং ৭০ টি স্থানে মাংস বিক্রয় করা হয় যার কোনটাতেই কোন স্বাস্থ্যবিধি বা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয় না। যার ফলে পরিবেশ দূষন ও ভোক্তাদের নানা ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এমতাবস্থায়, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ইফাদ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশ (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহযোগীতায় ও বেসরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) কর্তৃক বাস্তবায়িত রুরাল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট-আরএমটিপি এর আওতায় “নিরাপদ মাংস ও দূগ্ধজাত পণ্যের বাজার উন্নয়ন” উপ-প্রকল্প সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ৬ টি উপজেলার ২৪ হাজার খামারি ও ১ হাজার উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় “নিরাপদ মাংসের বাজার উন্নয়ন” উপ-প্রকল্পের কম্পোনেন্ট ৬ এর আওতায় সিরাজগঞ্জের শহর সংলগ্ন মহাসড়ক এর পাশের্^ শিলন্দা এলাকায় উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদ তার নিজস্ব জায়গাতে নির্মান করেছেন “মামা ভাগ্নে এগ্রো” নামের মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্ট।

জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সার্বিক তত্বাবধানে ও সম্পুর্ন হালাল ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতেই এক অনারম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যক্রম শুরু করেছে। এ অল্পদিনের মধ্যেই সাশ্রয়ী মূল্যে ও নিরাপদ মাংস ক্রয়ে এলাকার মানুষদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুপারসপ, মেডিকেল কলেজ ও কোম্পানীতে বড় বড় পাইকারী ওর্ডার পাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় ক্রেতাদের ভীর সবসময় লেগেই আছে।

আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তায় উন্নয়নকৃত মামা ভাগ্নে এগ্রো এই মাংস প্রক্রিয়াকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রকল্পের ১২০০ খামারির সাথে গরু ক্রয়ের চুক্তিভিত্তিক খামারায়ন ব্যবস্থা চালু করা আছে, যারা উন্নত কৃষি চর্চা অনুশীলন করে গবাদি প্রানী পালন করছে। অর্থাৎ গরু পালন থেকে শুরু করে পরিবহন, সঙ্গ নিরোধক,জবেহ ও প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষন ও সর্বোপরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌছানো পর্যন্ত নিরাপদ ও স্বাস্থগত বিষয়গুলো অত্যন্ত সচেতনার সাথে পর্যবেক্ষন করা হয়। এখন পর্যন্ত গরু মহিষ ও ছাগলের হতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার কেজি মাংস প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এখানে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী প্রানীর বিভিন্ন কার্টের মাংস ও ভুড়ি, মাথা, কলিজা বিক্রয় করা হয়।

দুরবর্তী এলাকা ও প্রিমিয়াম বাজারের অর্ডার পাচ্ছে কিন্তু এই মূহুর্তে উৎপাদিত নিরাপদ মাংস পরিবহনের জন্য ফ্রজেন ভ্যান না থাকায় এ অর্ডারগুলো নিতে সক্ষম হচ্ছে না।

আরএমটিপি প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকৃত মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে বিভিন্ন সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে। এগুলো হলো:

অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, প্লান্টে কর্মরত ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষন প্রদান, আইএসও সনদায়ন, প্লান্টের প্রক্রিয়াকৃত মাংসের বাজার সম্প্রসারনে লিফলেট সরবরাহ ও ফেসবুক বুষ্টিং, প্রিমিয়াম বাজারের ক্রেতাদের সাথে যোগসুত্র স্থাপন, এফ কমার্স/অনলাইনে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচিত করণ, বাজার সম্প্রসারনে পেইড সেলস প্রমোটার নিয়োগ, মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা।

উপ-প্রকল্প হতে মোট ১০ লক্ষ টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে এবং উদ্যোক্তার অবদান প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা। সরকার কর্তৃক স্বীকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন অনুযায়ী এবং প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের সরকারি বিধিমালা অনুসরন পূর্বক ৪ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা অবকাঠামোতে উক্ত মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টটি উন্নয়ন করা হয়েছে। যেখানে প্রানী ১ টা জবেহ-র জন্য জবেহ খানা, ১ টা মাংস প্রক্রিয়াকরণ, ১টা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত চিলার রুম ও ১ টা অফিস কক্ষ রয়েছে। যেখানে সম্পুর্ন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করে হাতের ছোঁয়া ছাড়াই বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মাংস প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ৬৮ ষাড় গরু জবাইকরনের মাধ্যমে নিরাপদ মাংস বিক্রি করা হয়েছে এবংব সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ম প্রতিষ্ঠানিক ব্যবসালয় হিসেবে মাংস বিক্রির সাড়া পড়েছে। গত দুই মাসে প্রত্যেকদিন খরচবাদে গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন। ইতিমধ্যে এসি আই (স্বপ্ন) ও প্রাইভেট সেক্টর ৫০ কেজি মাংস ক্রয় করছে।

এছাড়াও নাড়িভূড়ি,নলি, পায়া ও চামড়া থেকে প্রতি গরু থেকে ১২০০-১৫০০ টাকা আলাদা আয় করে থাকেন। উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভবিষ্যতে আউটলেট, ছাদে পায়া নেহারী দোকান এবং বিশেষকাট এর মাংস প্রিমিয়াম মার্কেটে বিক্রির পরিকল্পনা করছেন ।

উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “শুরুর দিকে উদ্যোগটি নিতে সাহস পাচ্ছিলাম না কিন্তু এনডিপি-র আরএমটিপি প্রকল্পের সহযোগীতা ও পাশে থেকে তাদের সার্বক্ষনিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা আমাকে সাহসী করে এবং সে থেকে প্লান্ট উন্নয়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম এখন ক্রেতার যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। সেই সাথে নিরাপদ মাংস ক্রেতার হাতে দিতে পেরেও নিজেকে গর্বিত মনে করছি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button