নাট্যকার, অভিনেতা মান্নান হীরা স্মরণে আয়োজিত সভায় একথা বলেন সভার মুখ্য আলোচক পশ্চিম বাংলা থেকে আগত বিশিষ্ট নাট্য গবেষক ড.আশিস গোস্বামী। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এর সভাপতিমন্ডলী সদস্য (রাজশাহী বিভাগ) ও নাট্যলোকের সভাপতি মমিন বাবু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক তার বক্তব্যে আরও বলেন,মান্নান হীরার কাজের মধ্যে মানুষের জন্য ভালোবাসা ছিল। তার নাটকে মানুষের জন্য কত সংলাপ ছিল। অথচ তিনি এখন আর সেই সংলাপগুলো লিখবেন না। বড় বেশি ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা দুই বাংলাতে যারা থিয়েটার করি, তাদের সকলের কণ্ঠ ম্রিয়মান। এই ম্রিয়মান কণ্ঠের ভেতর মান্নান হীরা যে আলো ফেলেছিল,সেটি তার চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে নিভে গেল। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে তার পথনাটকের হাল এখন কে ধরবে, তাও অনিশ্চিত। তিনি বলেন, তার মানের দ্বিতীয়জন এমুহুর্তে দেখা যায় না। তার রেখে যাওয়ার স্বপ্নগুলো সবার মাঝে আলো ছড়াতে পারে। তিনি এমাটিতে জম্মে শুধু সিরাজগঞ্জকে আলোকিত করেনি, করেছেন এপার বাংলা একই সঙ্গে ওপার বাংলাকেও। তিনি বাংলাদেশের একজন সম্পদ ছিলেন। এসময় মুখ্য আলোচক আরো বলেন, মান্নান হীরা’র কর্মের ওপর একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়নি। তিনি বলেন যেখানে মান্নান হীরা শায়িত রয়েছেন তার ওপর একটি স্মৃতিফলক নির্মানের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এবিষয়ে তিনি তার সাধ্যমত সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
নাট্যলোক সিরাজগঞ্জ এর উদ্যোগে গত বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ) বিকেল ৩টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে নাট্যকার, অভিনেতা মান্না হীরার স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আরো স্মৃতিচারণ করেন কোলকাতার ফ্রন্টলাইন থিয়েটার এর সম্পাদক অভিজিৎ সেনগুপ্ত। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মান্নান হীরা ছিলেন মহুমাত্রিক মানুষ। এই বহুমাত্রিক মানুষটি ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন। তিনি আরো বলেন, শিল্পের সকল শাখায় তাঁর বিচরণ ছিল। এছাড়ও আলোচনা করেন পশ্চিম বাংলার অশোক নগর এর সাংস্কৃতিক সংগঠন হেমাঙ্গ সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক তাপস ব্যানার্জী, বিএমএ সিরাজগঞ্জ এর সভাপতি, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জহুরুল হক রাজা, নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদউদ্দিন হীরা, সিরাজগঞ্জ গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মৃত্তিকা নাট্য গোষ্ঠীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুলই ইসলাম জগলু চৌধুরী, বাসদ নেতা নবকুমার কর্মকার কেয়া, কবি হুমায়ন, সাংস্কৃতিক কর্মী কেয়া নাহার প্রমুখ।
স্মরণে আয়োজিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি সাবেক সভাপতি হেলাল আহমেদ দৈনিক সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন পএিকার নির্বাহী সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক পাঠাগার এর সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন, নাট্য ব্যাক্তিত্ব তোফা হাসান, কথক থিয়েটারে সভাপতি হাফিজুর রহমান সামাদ, দুর্বার নাট্য গোষ্ঠীর সভাপতি স.ম. আলাউদ্দিন, সিরাজগঞ্জ নাট্য ফেডারেশনের সভাপতি গোলজার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভোলা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান সোহাগ, নাট্যলোকের সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় সূত্রধর রিপন, নাবিক নাট্যগোষ্ঠীর সিনিয়র সদস্য গোলাম মোস্তফা, কথা সাহিহিত্যক মনিরুজ্জামান খান, কবি গৌতম সাহা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিমা, আল্পনা ভৌমিক, ছাম্মি আহমেদ আজমীরসহ বিভিন্ন সংগঠনের সন্মানিত নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন।
সমাপণি বক্তব্যে সভার সভাপতি, নাট্যলোকের সভাপতি মমিন বাবু তার বক্তব্যে বলেন, হীরা ভাই সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহন করলেও তিনি ছিলেন তার কর্মেও মধ্যদিয়ে দিয়েই তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্ববধানে ও উপস্থাপনায় ছিলেন জুয়েল আলভী ।
উল্লেখ্য, মান্নান হীরা ছিলেন বাংলাদেশে নাট্য ইতিহাসে এক বিশিষ্ট নাম। তিনি পথ নাটকের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। মান্নান হীরা প্রায় ১৫টি নাটক লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- লাল জমিন, ভাগের মানুষ,ময়ূর সিংহাসন, সাদা-কালো ইত্যাদি। এছাড়া ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা’ মান্নান হীরা রচিত ও নির্দেশিত অন্যতম পথনাটক।
নাটক রচনার পাশাপাশি তিনি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নাটক পরিচালনাও করেন। ২০১৪ সালে তিনি সরকারের অনুদানে শিশুতোষ চলচ্চিত্র একাত্তরের ক্ষুদিরাম তৈরি করেন। এটি তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। এ ছাড়া ‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রংপেন্সিল’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্যও পরিচালনা করেন। ন্ট্যাকার মান্নান হীরা ১৯৫৬ সালে সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৬৪ বছর বয়সে মারা যান।