সদরসিরাজগঞ্জ

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ জীবনযুদ্ধে পরাজিত

স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীনতার ৫২ বছরেও

আমিনুল ইসলাম : নিজের জীবন বাজী রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ। অথচ দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীনতার ৫২ বছওে আজও মেলেনি  তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। জীবন সংগ্রাম আর দেশ স্বাধীনের ৫২টি বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম- অর্ন্তভুক্ত না হওয়াতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ। তাঁর আকুতি প্রধানমন্ত্রী যদি একটু সু-দৃষ্টি দেন তাহলে জীবনের শেষ বয়সে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হবে এবং মৃত্যুর পূর্বে নিজেকে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে শান্তনা দিতে পারবে।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের দোয়েল গ্রামের মৃত খোদা বকস সরকারের ছেলে মো. আব্দুর রশিদ সরকার (৬৮) মহান মুক্তিযুদ্ধে বেসরকারি সাব সেক্টর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পলাশডাঙ্গা যুব শিবির থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকসেনাদের প্রতিহত ও পরাস্থ করেন। দেশ স্বাধীনের পরে অ¯ ¿জমা দেন। স্বীকৃতি হিসেবে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির পরিচালক প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জা তাকে সনদ প্রদান করেন। শুধু তাই নয় দেশরক্ষা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ যুদ্ধকালীন কমান্ডার আমির হোসেন ভুলুর মাধ্যমে সনদ প্রাপ্ত হন। তিনি মহকুমা প্রশাসকের নিকট অস্ত্রও জমা দেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের প্রায় ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও তার নাম বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি।

নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে ২০১৭ সাল থেকে একাধিকবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যাচাই-বাছাই কমিটি তার আবেদন বাতিলের তালিকাভুক্ত করায় আজও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি। আর সেজন্যই মিরছেনা তারভাগ্যে কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা।

একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কেন নাম তালিকাতে নেই এমন প্রশ্ন করতেই আব্দুর রশিদ সরকার কান্না জড়িত কন্ঠে সংবাদকর্মীদের বলেন, নিজের জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু দেশ স্বধীনের ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নাম নেই। নিজের সন্তানদের নিকপ পরিচয়ও দিতে পারিনা আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। অথচ স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে আমি পরাজিত। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন- যুদ্ধকালীন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার থেকে শুরু করে সর্বশেষ স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রত্যয়ন প্রদান করলেও ৭নং সেক্টরের একজন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। তাই সরকার প্রধানের নিকট আবেদন যুদ্ধকালীন সময়ের তার সকল প্রমাণপত্র যাচাই করে দ্রুতার সাথে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

তিন কন্যা আর এক পুত্র সন্তানের জনক বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী এক যোদ্ধা অথচ স্বাধীন দেশে যুদ্ধের স্বীকৃতি আদায়ে আজ তিনি পরাজিত। দেশের গর্বিত বীরমুক্তিযোদ্ধ আব্দুর রশিদ আজ রোগ-শোক আর কষ্টে থাকা পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যের দোকানে কাজ করে কোন রকম বেঁচে আছেন।

এলাকাবাসি ও তার পরিবারের দাবী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত কওে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা প্রদান করুক এবং তার পরিবারে প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক  স্থানীয় প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button