মেলা বাংলাদেশের লৌকিক জনপ্রিয় উৎসব। এদেশের মেলার উৎপত্তি মূলত গ্রাম – সংস্কৃতি থেকে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোক উৎসব চড়ক পূজা। প্রতি বছর বৈশাখের শেষ দিন পর্যন্ত চলে এই মেলা। অবশ্য কোনও কোনও জায়গায় সময়ের ব্যাতিক্রমও ঘটে।
রোববার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৯ নং কালিয়া হরিপুর ইউয়িনের দিঘলকান্দি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে চলছে মেলার অন্যতম আকর্ষণ চড়ক পূজা। মূলত চড়ক পুজাকে কেন্দ্র করেই আয়োজন করা হয় এই মেলার। মেলা উপলক্ষে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও অন্যান্য লোকদের বাড়িতে স্বজনদের ব্যাপক ভিড় পরিলক্ষিত হয় । জামাই ঝি সহ সকল আত্বীয়-স্বজনদের আগমনে এলাকায় ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা তাদের বোন ও বোনের জামাইয়ের নিকট আদায় করে নেয় নজরানা। তাছাড়াও সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত মেলায় চলে বিভিন্ন খাদ্য, পোশাক ও নানা রকম খেলাধুলা সরঞ্জাম ও নিত্য সামগ্রীর দোকান। দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঝুড়ি, বুন্দি, জেলাপি, গজা, খাজা বাতাশা,খুড়মাসহ হরেক রকমের নতুন নতুন মিষ্টি ।
মেলায় সবশ্রেণির মানুষদেরই নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। দেখা যায় অনেক জামাইদের । মেলায় দেখা হয় ঘুরতে আসা খেটে খাওয়া জামাই সুনিল বাবুর সাথে। তিনি জানান প্রতিবছরই মেলা উপলক্ষে শ্বশুর বাড়িতে চড়ক পূজা উপলক্ষে এসে ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মাঝে সময় কেটে যায়। সাথে সাথে ছোট ছোট শ্যালক ও শালিকাদের চাহিদা পূরণ করতে হয়। অনেক সময় এদের চাহিদ পূরণ করতে হিমসিম খেতে হয়।
এ ব্যাপারে মেলার এক আয়োজক গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায় প্রধান জানান, প্রতি বছরই ভগবানের নৈকট্য লাভের জন্য চড়ক পূজার আয়োজন করে থাকি। ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মধ্যে মেলা চলে। সকলের নজর কেড়ে নেয় পিঠে বড়শি বিধিয়ে চড়কে চড়ে ঢোল বাজানোর দৃশ্য।
এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মু্িক্তযোদ্ধা সুকুমার চন্দ্র দাস জানান নববর্ষের পূর্বক্ষণ বৈশাখ মাসে সৈন্যাস ব্রত গ্রহণান্তে সংক্রান্তি দিনে মহাদেবের মনতুষ্টির জন্য পূজা অন্তে সমাজ জীবনে প্রবেশ করে। বাংলার এই সংক্রান্তিতে উৎসব দেখা যায় আর প্রতিটি এলাকায় বসে গ্রামীণ মেলা। বংশ পরস্পরায় চলে আসছে এই চড়ক পূজার মেলা। সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে, নগরায়ন হয়ে আজও কিন্ত মেলার আবেদন আগেও ছিল এখনও আছে।