সদরসিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের আজীবন নৌকার মাঝি জননেতা মোতাহার তালুকদার এর ২২তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

প্রতিদিন প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, আমৃত্যু সভাপতি, ভাষা সৈনিক জননেতা মোতাহার হোসেন তালুকদার এর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী গত শনিবার (২ ডিসেম্বর ২০২৩) সিরাজগঞ্জে শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়। এ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও প্রয়াত নেতার স্মরণে দোয়া ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মরহুমের গজারিয়া গ্রামে মসজিদে ও মোতাহার হোসেন তালুকদার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর আয়োজনে প্রয়াত নেতার রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত নেতার কনিষ্ঠপুত্র শামীম তালুকদার এর লাম এন্টারপ্রাইজ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে  দুস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মরহুম মোতাহার হোসেন তালুকদার স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.এম. হোসেন আলী হাসান। 

আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, প্রয়াত নেতার কনিষ্ঠ পুত্র শামীম তালুকদার এর সহধর্মিনী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত  জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের য্গ্মু সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, সহসভাপতি আবু ইউছুফ সুর্য, আব্দুল বারী শেখ, সিরাজগঞ্জের পিপি অ্যাড. আব্দুর রহমান, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, ফিরোজ ভুইয়া, আলহাজ ইসহাক আলী,অ্যাড. বিমল কুমার দাস প্রমুখ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী, দলীয় কর্মী ও মরহুমের আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহীগন।

এদিন মোতাহার হোসেন তালুকদার হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও দোয়া মাহফিল। দোয়া মাহফিলে অংশনেন কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবুল হোসেন সন্টু। এসময়ে কলেজের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।  এছাড়াও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকেও এদিন দোয়া ও স্মরণ সভা ও  মীম এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে দুস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদার জন্মেছিলেন ১৯২০ সালে সিরাজগঞ্জের অদূরে গজারিয়া গ্রামে। বাবা নইমুদ্দিন তালুকদার ছিলেন শিক্ষক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ছেলেবেলায়  শুভগাছা গ্রামের জিয়ার পন্ডিতের পাঠশালা, ম্যাট্রিকে পাবনার জিসি ইন্সষ্টিটিউট থেকে। এরপর আইএসসি পাস করেন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। পরে রাজশাহী সরকারি কলেজে বিএসসি অধ্যয়ন করেন।

জননেতা মোতাহার মাষ্টার রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন সেই ছাত্রজীবনেই। দেশভাগের আগে ছিলেন নিখিল বঙ্গমুসলিম ছাত্রলীগের সদস্য। ১৯৪৬ সালের পাকিস্তান আন্দোলনের নির্বাচনে কাজিপুরে মুসলিম লীগের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করেন। ছাত্রনেতা হিসেবে  ৪৮ সালে তিনি গোটা উত্তর বাংলা চষে বেড়িয়েছেন ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করতে।

ভাষা সংগ্রামী মোতাহার হোসেন ১৯৫২ সলে বিএসসি শিক্ষক ছিলেন স্থানীয় হাজী আহম্মদ আলী হাই স্কুলে। এই সময়ে ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে ক্লাস বর্জন করেন। ফলে ইতি ঘটে শিক্ষাকতা জীবনের। আরও গভীরভাবে সক্রিয় হয়ে পড়েন  জাতীয় রাজনীতিতে।

১৯৪৯ সালে ৬ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে সিরাজগঞ্জের আরেক এক কৃতী সন্তান মওলানা আবব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ। এর প্রায় ৪ মাস পর ১৯৪৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে গঠিত হয় মহুকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগ। এই কমিটিতে প্রয়াত মোতাহার মাষ্টার নির্বাচিত হন সাংগঠনিক সম্পাদক। সেই থেকে ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন সিরাজগঞ্জ আওয়ামী মুসলিম লীগ পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। তিনি ছিলেন আমৃত্যু সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি।

প্রয়াত এই নেতা গোটা জীবনে জীবিকার তাগিদে ব্যবসা করলেও তার মন ছিল রাজনীতিতে। দীর্ঘ ৫৫ বছর রাজনৈতিক জীবনে সান্নিধ্য পেয়েছেন যুক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসাইন শহিদ সোহরাওয়ার্দ্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশ বরণ্য ব্যক্তিদের।

মোতাহার মাষ্টার মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে কারাবারণ করেছেন একাধিকবার।  ৭০ সালে কারাগার থেকেই নির্বাচিত হন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরে য্দ্ধু পরিচালনা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন নিয়ে এলে তিনি হন সিরাজগঞ্জের গভর্ণর।

প্রয়াত মোতাহার হোসেন আবাস গড়েছিলেন শহরের মারোয়ারী পট্টী আজকের মুজিব সড়কে। রাজনীতিতে তার বাড়ি হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানের জাতীয় নেতাদের আবাসস্থল। এই বাড়িতেই উঠেছেন এবং থেকেছেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দ্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহিদ এম. মনসুর আলী এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান সিরাজ, আ ফ ম মাহবুবুল হকসহ অনেক দেশবরণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় মোতাহার মাষ্টার দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে নানা ঘটনা, আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত করে এই অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬ দফার আন্দোলন,  ৬৯ এর গণঅভ্যুন্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ সালের মহান মুক্তিয্দ্ধু এবং যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশ গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনকে এক ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে ২০০১ সালের ২ ডিসেম্বরে। আজ শারিরীকভাবে পৃথিবীতে তিনি অনুপস্থিত থাকলেও সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের কাছে তিনি দলের উর্দ্ধে এক রাজনীতিক।  জীবদ্দশায় ছিলেন জননেতা। মৃত্যুর পরও তিনি জননেতা মোতাহার মাষ্টার হিসেবেই আছেন, থাকবেন উত্তর জনপদের যমুনা পারের মানুষের কাছে। গত শনিবার ছিল তার ২২তম মৃত্যু বার্ষিকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button