অপরাধসদরসিরাজগঞ্জ

বিয়ের ১১ মাস পর গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

বিয়ের ১১ মাস পর মীম আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া জিদারবাড়ি এলাকায় সাইফুলের ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের স্বামী মিলন হোসেন (২৪) একজন পোশাক কারখানার শ্রমিক। মীম সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার রানীগ্রাম মহল্লার আব্দুল মজিদ মণ্ডলের একমাত্র মেয়ে। তিনি শিশুকাল থেকে খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চর শৈলাবাড়ী গ্রামে মামার বাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকেই তার বিয়ে হয়।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা থেকে মীমের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনার পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বার বার মূর্ছা যান বাবা-মা। কান্নায় ভেঙে পড়েন মামা-মামীসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা। রাতেই চর শৈলাবাড়ী কবরস্থানে মীমের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

নিহতের মামা বাবলু হোসেন ও মামাতো ভাই শাকিল আহমেদ জানান, গত বছরের মার্চে মীম আক্তারকে পার্শ্ববর্তী ভাটপিয়ার গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বেপারির ছেলে মিলনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যান শ্বশুর আব্দুল মজিদ মণ্ডল। তিনি মেয়ে জামাইকে গার্মেন্টেসে চাকরি নিয়ে দেন। একই বাড়িতে তারা বসবাস করছিলেন। শনিবার বিকেলে মিলন তার চাচার মৃত্যু হয়েছে এমন মিথ্যা কথা বলে গার্মেন্টস থেকে ছুটি নেন। ছুটি নিয়ে বাসায় এসে স্ত্রী মীমকে ভাত চড়িয়ে দিতে বলেন। এ সময় তার শ্বশুর-শাশুড়ি বাসায় ছিলেন না। মিলন ঘরের মধ্যে জোরে আওয়াজ দিয়ে সাউন্ডবক্সে গান বাজাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরেই ঘর থেকে বেরিয়ে যান। মিলন বেরিয়ে যাওয়ার পর বাসার অন্য ভাড়াটিয়ারা ভাত পুড়ে যাচ্ছে দেখে মীমকে ডাকতে থাকেন। মীমের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পান তারা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহতের বাবা আব্দুল মজিদ মণ্ডল বলেন, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন জামাই মিলন হোসেন। তার চিৎকার যাতে কেউ না শুনতে পায় সেজন্য জোরে সাউন্ডবক্স বাজিয়েছে। আমি এক লাখ টাকা জমিয়ে ঘরে রেখেছিলাম মেয়ের জন্যই। সেই টাকা আর সোনার গহনা লুট করে পালিয়েছেন মিলন।

মামাতো ভাই শাকিল আহমেদ বলেন, মিলনের মা নেই। তার বড় বোনের কথায় তিনি চলতেন। বড় বোন অনেক টাকা ঋণ। সেই ঋণ পরিশোধ করতেই মীমকে হত্যা করে টাকা ও গহনা লুট করেছেন।

খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ মুকুল বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। মীম খুব ভালো মেয়ে। ওর পরিবারের সবাই ভালো। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল তিনি। শিশুকাল থেকেই মামার বাড়ি থেকে বড় হয়েছে। সবার আদরের ছিলেন মীম। তাকে নির্মমভাবে হত্যা কেউ মেনে নিতে পারছি না।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুল হোসেন বলেন, শনিবার রাতে মীমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। ঘটনার পর থেকে স্বামী মিলন হোসেন পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button