ফজলুল হক খান, রায়গঞ্জ প্রতিনিধি: শাওন মাসের গত পরশু পর্যন্ত রায়গঞ্জের মাঠ খরায় পুড়ছে । যদিও গতকাল এক পসলা বৃষ্টি ছোয়া দিয়ে গেল কিন্ত আমন লাগানোর উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এখনও সেচ পাম্পই কৃষকের ভরসা।
রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার এ সময়ে উপজেলার নিচু ও বিল এলাকাগুলোতে পানিতে থৈ থৈ করে। নদী , খাল – বিলও ভরে যায়। কিন্তু প্রায় ১৫ দিনেরও অধিক সময় বৃষ্টি না হওয়ায় নিচু ও বিল এলাকার জমিও ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
পাঙ্গাসি ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ তালুকদার বলেন, এ সময়ে প্রতিবছর উচু জমিগুলো রোয়া আমনের চারা লাগানো প্রায় শেষ হয়ে যায়। এবং জমিতে সার প্রয়োগ করার সময় হয়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টি না হলে তো আর কৃষক হিসেবে বসে থাকা যায় না। তাই এখন সেচ পাম্প দিয়ে চারা লাগানোর চেষ্টা করছি।
ধানগড়া ইউনিয়নের লাহোর গ্রামের কৃষক গোলবার হোসেন প্রামানিক বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে চারা রোপনে দেরী হয়ে গেছে। উপায় না থাকায় শেষ পর্যন্ত সেচ পাম্প দিয়ে কিছু জমির চারা রোপন করেছি। কিন্তু এত তাপমাত্রা যে সকালে জমিতে পানি দিলে বিকেলেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
এভাবে সেচ দিতে থাকলে আমাদের ধান উৎপাদনের একটু খরচ একটু বেড়ে যাবে। তা হলেও তো কিছু করার নেই। বৃষ্টির লক্ষণ না বোঝায় এ দুই কৃষকের ন্যায় উপজেলার প্রত্যেকটি কৃষক সেচ পাম্প থেকে পানি নিয়ে জমি চাষ করা শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরে ১৯ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে রোয়া আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২০ হাজার ৩৭০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে চান্দাইকোনা ইউনিয়নে ২ হাজার ১৫০ ,ধানগড়া ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৪৫, ধামাইনগর ইউনিয়নের ৩ হাজার ২১০, সোনাখাড়া ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৯০, ধুবিল ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৯০, নলকা ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৬০, পাঙ্গাসি ইউনিয়নে ১ হাজার ৯০৫, ব্রম্মগাছা ইউনিয়নে ২ হাজার১৭৫, ঘুরকা ইউনিয়নে ২ হাজার ০২০, এবং রায়গঞ্জ পৌরসভায় ৪ শত ৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফ জানান, কৃষকদের সাথে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সেচ পাম্প দিয়ে জমিগুলোর চারা রোপণ করার জন্য তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়ার এ অবস্থায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে সিরাজগঞ্জ প্রতিদিনকে বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে না এ কথা ঠিক – তবে বৃষ্টি শুরু হলে কৃষকেরা এ ক্ষতি পুষে উঠতে পারবেন । আমরাও আমাদের দপ্তরের মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করেছি । কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে যখন যে পরামর্শ তাদের দেয়া দরকার আমরা সেটি দিয়ে যাব। আশা করছি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।