এনডিপি প্রতিনিধি : পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিরাজগঞ্জে ৫দিন ব্যাপি রেইজ প্রকল্পের শিক্ষাণবিশদের জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ এর সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এনডিপি) এর আয়োজনে এনডিপি’র প্রধান কার্যালয়ের হলরুমে দুটি ব্যাচে ৫০ জনের অংশগ্রহণে ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ৫দিন ব্যাপি এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা গত ১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শেষ হয়।
এনডিপির নির্বাহী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন খান এর সভাপতিত্বে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা। এসময় এনডিপির পরিচালক (ঋণ সহায়তা কর্মসূচি) মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, এনডিপি রেইজ প্রকল্পের সমন্বয়কারী কৃষ্ণ দাস সাহা সহ রেইজ প্রকল্প এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, দেশের স্বল্প শিক্ষিত স্বল্প আয়ের শিক্ষার্থীদের তাদের ব্যবহারিক কাজ হাতে নাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত হওয়া যাতে তারা সবাই নিজ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনাদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের এই ভিশনকে বাস্তবায়নের হাতিয়ার আপনারা। আমরা সবাইকে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যেতে চাই। সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলা গড়তে চাই। এই শিক্ষা আপানাদের বাস্তবজীবনে কাজে লাগাবেন এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এসময় তিনি স্বল্প আয়ের পরিবারের ছেলে মেয়েদের এ ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়ায় তিনি এনডিপিসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন খান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যে শ্রেণীর জনগোষ্ঠি এটিই বাংলাদেশে এখন ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ। এদের কে যদি আসলে দক্ষতা দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান করা যায় তবে দেশটি এগিয়ে যাবে। এসডিজি যে গোল তারমধ্যে ১৩টি গোল এনডিপি সরাসরি বাস্তবায়ন করে বা বাস্তবায়নে সহায়তা করে। আজকে তোমরা যারা এই সুযোগটা পেয়েছো তোমরা ভাগ্যবান কারণ তোমাদের মত যুবক যুবা অনেক রয়েছে সবাই কিন্তু আমাদের কাছে আসতে পারেনি। সবাই এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেনি তোমরা কিন্তু কোন না কোন কাজের সাথে সরাসরি জরিত ছিলে ওস্তাদের সাথে ছিলে। তোমাদের সেই ওস্তাদের সাথে থেকে কিভাবে এই কাজকে আরও সুন্দর ভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেই সুযোগটা তৈরী করার জন্য আমরা কাজ করছি। যে কাজটি তোমরা কর সেই কাজটি কিভাবে কোন পরিবেশে করলে কি আচরণ করলে কি গুণাবলী শিখলে সেগুলো থেকে তোমরা ভালো উদ্যোক্তা হতে পারবে সেটি তোমরা করবে। আমরা তোমাদের পাশে আছি। তোমরা যারা কাজ করতে চাও নিজেরা উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত বোধ করো তাদের আমরা ঋণ সহায়তা দিয়ে সাহায্য করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। কাজেই তোমাদের এইটা ভাবার কোন কারণ নেই যে ৬ মাসের ট্রেনিং দিয়েই এনডিপি তোমাদের ছেড়ে দিয়েছে তা নয়। যারা স্বস্ব ক্ষেত্রে কাজ করতে চাও উদ্যোক্তা হতে চাও আমরা তোমাদের সাথে আছি। তোমারা এই যে কাজগুলো শিখলে প্রশিক্ষণ থেকে বা এই কর্মশালা থেকে এগুলো মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই আমরা যে উদ্দেশ্যে এই কাজ গুলো করছি যেটা সফল হবে। আমরা সরকারের পাশাপাশি সরকারের সাথে থেকে পাশে থেকে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তোমারা যারা এই প্রশিক্ষণ শেষ করতে যাচ্ছো আমি তোমাদের জীবন সুন্দর হোক সার্থক হোক এই কামনা করছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে নিম্ন প্রযুক্তির ফাঁদ ও স্বল্প মজুরীর চক্র হতে বের করে নিয়ে এসে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থানে নিযুক্ত করার লক্ষ্যে আজকের এই প্রশিক্ষণ। স্বল্প শিক্ষিত ও অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা পরিবারের বোঝা। তারা দেশের জন্যও বোঝা। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেরা প্রশিক্ষত হয়ে নিজেদের পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজের কর্মসংস্থান করা এবং অন্যের জন্যও কর্মসংস্থান করতে পারবে। এছাড়াও বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেও এই কর্মদক্ষতা ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
এছাড়াও তিনি প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষণ শেষে উদ্যোক্তা হতে বা ব্যবসায় সহায়তার ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা দিয়ে পাশে থাকা হবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, পিকেএসএফ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন Recovery and Advancement of Informal Sector Employment (RAISE) প্রকল্পটি সারাদেশের ৭০টি সংস্থার মাধ্যামে শহর ও শহরতলি অঞ্চলে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় তরুণ উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ঋণ সহায়তা প্রদান ছাড়াও অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত ৯০ হাজার ছোটো উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।
রেইজ প্রকল্পে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর তরুণদের অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সার্বিকভাবে প্রকল্পটির আওতায় দেশব্যাপী ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ছোটো উদ্যোক্তাকে ‘লো লেভেল টেকনোলজি ট্র্যাপ’ হতে বের করে এনে টেকসই কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে যা ছোটো উদ্যোগগুলোর ক্রমবিকাশে বিশেষ সহায়ক হবে এবং এদেরকে পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা প্রদান করা হবে।
প্রকল্পটির আওতায় এনডিপি গত অর্থ বছরে ২৩জন মাস্টার ক্রাফটসপার্সনের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া জেলার ৪৫ জন তরুণ শিক্ষানবিশদের ‘ওস্তাদ-সাগরেদ’ মডেলে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ৩০ জনকে বিভিন্ন কর্মমূখি ট্রেডে যুক্ত করতে পেরেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে ৬ মাস ব্যাপী হাতে কলমে ৩৮ জন মাস্টার ক্রাফটসপার্সনের মাধ্যমে ১০০ জন তরুণ শিক্ষানবিশদের উক্ত মডেলে ওয়েল্ডিং এন্ড ফ্রেব্রিকেশন, বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং, মোবাইল সার্ভিসিং, মোটর সাইকেল সার্ভিসিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কের্টি, এসি ফ্রিজ সার্ভিসিংসহ নানা কর্মমূখি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ৫দিন ব্যাপী এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এনডিপির প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের পক্ষ হতে উক্ত তরুণ শিক্ষানবিশদেরকে সফট স্কিলস ও লাইফ স্কিলস বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে যা তাদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে উৎসাহিত করবে।