চৌহালীসিরাজগঞ্জ

চৌহালীতে ছড়িয়ে পড়ছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ

ইদ্রিস আলী: সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে হঠাৎ করে বেড়েছে গবাদি পশু গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারি ও প্রান্তিক কৃষক। পল্লি পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান। এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

উপজেলার খাষকাউলিয়া, ঘোরজান, খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া,উমারপুর, স্থলচর ও সদিয়াচাদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হঠাৎ করে গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে আক্রান্তের তুলনায় কম মারা যাচ্ছে গরু। প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন খামারিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেককে কবিরাজ ও পল্লি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌহালীতে মোট ছোট-বড় ৪৭৫টি খামার আছে। এতে গরুর সংখ্যা ৯৩ হাজার ৪৪১। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত শতাধিক গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। লাম্পি স্কিন রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে খামার ও বসতবাড়ির আশেপাশে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে দুরে সম্ভব হলে আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখতে হবে। অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।

উমারপুর ইউনিয়নের মধ্য শিমুলিয়া উত্তরপাড়ার আইয়ুব আলী সরকার ও ঘোরজান ইউনিয়নের চরজাজুরিয়া গ্রামের নায়েব আলী জানান, তাদের পশু লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অভাবের সংসারে তারা খুব চিন্তায় আছেন।

 উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. জান্নাতি খাতুন বলেন, লাম্পি স্কিন গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ। যার প্রতিষেধক বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পাওয়া গেলেও সরকারিভাবে এখনো আসেনি। আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ বের হয়। অল্প দিনে গরু শুকিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু লাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে কিছু লক্ষণজনিত চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। যেমন- প্যারাসিটামল-২টা, খাবার সোডা-৫০গ্রাম, আঁখের গুড়-৫০ গ্রাম, লবন-২৫ গ্রাম, নিমপাতা বাটা-২৫ গ্রাম। ঔষধগুলো ২ লিটার পানিতে গুলিয়ে বড় গরুকে ১ লিটার সকালে ও ১ লিটার বিকালে এভাবে মোট ৫থেকে ৭ দিন খাওয়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন,গরুর সঠিক পরিচর্যা, আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখা ও বাসস্থান পরিষ্কারপরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান বলেন, গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ পশু চিকিৎসকদের এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে বলা হয়েছে। কোনো ভুল ও অপচিকিৎসায় যেনো কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button