কামারখন্দসিরাজগঞ্জ

উপজেলার প্রথম শহিদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলার এক যুগেও নির্মাণ হয়নি

কামারখন্দ প্রতিনিধি: প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি ভাষা প্রেমীদের মাঝে ঠিকই আসে। কিন্তু ১৯৭০ সালে নির্মিত সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্মিত প্রথম শহিদ মিনারটি আর নেই ।

গ্রামের বাসিন্দারা সর্ব প্রথম বাঙালি ভাষার সকল নাগরিকদের মধ্যে একুশের চেতনাকে উজ্জীবিত করতে ১৯৬৯ সালে শহীদ মিনার স্থাপনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একুশে ফেব্রুয়ারি পালন শুরু করে । তারপর থেকে প্রায় ৪৯ বছর যাবত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ প্রতি বছর শহিদ মিনারটিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি একুশে ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের আয়োজন করা হতো।

শহিদ মিনারটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলী কাইয়ুম হায়দার জানান, মরহুম আলী রেজা হায়দারে নেতৃত্বে ৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে ‘‘হায়দারপুর ছাত্র সমাজ’’ নামে এক সংগঠনের জন্ম হয় । সেই সংগঠনের উদ্যোগেই এই গ্রামে নানা ধরনের জাতীয় অনুষ্ঠান যেমন, নজরুল রবীন্দ্র জয়ন্তী ইত্যাদি পালন করা হতো । আমরা সেই সময়ে হারমোনিয়াম, ডুগি, তবলা দিয়ে হাটে-বাজারে গিয়ে নানা ধরণের দেশাত্মবোধক গান গেয়ে, কুপন তৈরি করে টাকা সংগ্রহ করতাম । পরে আমরা পকেটে লাগানো ব্যাচ তৈরি করলাম যাতে লেখা থাকত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ইত্যাদি কারও পকেটে ঐ ব্যাচ লাগিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বুঝালেই দুই আনা, চার আনা, আট আনা, সর্বোচ্চ এক টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেত। এভাবেই টাকা পয়সা সংগ্রহ করে শহিদ মিনার তৈরির জন্য ইট ক্রয় করলাম । পরে স্বল্প পুঁজির কারণে ঐতিহ্যবাহী ছাগলা পাগলা ব্রিজ থেকে মাথায় করে বালু ও ইটখোলা থেকে ইট এনে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয় । এটি নির্মাণে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অবদান স্মরণীয়। তাদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী কবির হায়দার, আলী আকবার হায়দার, নজরুল ইসলাম, সেকেন্দার আলী, ইমাম হোসেন, আলী আশরাফ সরকার মিন্টু, নূর হোসেন, নূর মোহাম্মাদ, তারপর আরও রয়েছে আলী মাসুদ হায়দার, আলী কাইয়ুম হায়দার, জহুরুল ইসলাম লাবু, নূরি ইসলাম বুলবুল, ছাইদুল ইসলাম, গোলবার হোসেন মন্ডল সহ আরও অনেকে। আমরা বর্তমানে খুবই মর্মাহত, কারণ আমাদের পরিশ্রম, উদ্যম এবং দেশ প্রেমের ফসল শহীদ মিনারটি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয় । আমরা এটা আর নির্মাণ করতে পারছি না ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী জানান, এটা ভেঙ্গে ফেলার পর আমার কি পরিমাণ যে কষ্ট লেগেছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। তারপরে আবার এটা তৈরি করার উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি । গ্রামের রাজনীতিবিদ এম আশরাফ সরকার জানায়, গ্রামে শহিদ মিনারটি না থাকায় বর্তমান প্রজন্মের স্মার্ট ফোনের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা ভুলে যেতে বসেছে । শহীদ মিনারটি পুনরায় নির্মাণ না করা গেলে হয়তো তারা একুশে ফেব্রুয়ারি সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ভুলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button