সদরসিরাজগঞ্জ

বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সিরাজগঞ্জ, বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মাঘের শীতে কাবু হয়েছে পুরো দেশ। তীব্র শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। হাড় কাঁপানো শীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রির নিচে। এমন অবস্থায় যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার (২২ জানুয়ারি) তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় সিরাজগঞ্জের মোট ১৬৭১টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদিন ও মোট ৫৮৪টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুইদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে এ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

সকাল থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল সিরাজগঞ্জের জনপদ। পাশাপাশি বইছিল হিমেল হাওয়া। আগের দিনের মতোই সূর্যের আলো না দেখা যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কর্মজীবনে নামে স্থবিরতা। তারপরও জীবিকার তাগিদে শীতকে উপেক্ষা করেই কাজে বের হচ্ছেন অনেকে। বাঘাবাড়ি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে গতকাল তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের হিসেবে ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালের তাপমাত্রা ছিল চলতি শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলার চলনবিল ও শস্যভাণ্ডার অধ্যুষিত তাড়াশের ঘরগ্রামের কৃষক কবির উদ্দিন ও কৃষ্ণপদ ঘোষ বলেন, এখন বীজতলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে জমি সেচ নিয়ে ধান লাগানোর সময়। কিন্তু শীতের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। শীতের কারণে কৃষি শ্রমিক পেতেও খুব সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই শীতের কারণে কাজ করতে চাইছে না, যারা করছে তারাও বেশি মজুরি নিচ্ছে। এদিকে কাজও ফেলে রাখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই শীতকে উপেক্ষা করে কষ্ট করে কাজ করতে হচ্ছে।

এদিকে শীত বেড়ে যাওয়ায় পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে বেড়ে গেছে বিক্রি। নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভিড় করছেন ফুটপাতের এই দোকানগুলোতে। সিরাজগঞ্জ শহরের এসএস রোডের পুরাতন গরম কাপড়ের ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনে শীত বেড়ে যাওয়ায় দোকানে গ্রাহকের ভিড় বেড়েছে। এ সময় বেচাকানো বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তিনি বলেন, যেহেতু শীত বেড়েছে তাই নিম্ন আয়ের মানুষ একটু অল্প টাকার মধ্যে ভালো গরম কাপড় কিনতে চায়। তাই তারা এখন অনেকটা বাধ্য হয়েই ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় করেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম আব্দুর রহমান তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি আবহাওয়া অফিসের হিসেবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে আসায় জেলার মোট ১৬৭১টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অফিসিয়াল কার্যক্রম চলমান থাকবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. আফসার আলী বলেন, আমি সব সময় খোঁজ রাখছি তাপমাত্রা কত ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। বাঘাবাড়ি এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় এবং শিক্ষার্থীদের শীতে কষ্টের কথা ভেবে জেলার মোট ৫৮৪টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় এই আবহাওয়া জানুয়ারি মাসজুড়েই থাকতে পারে। এ ছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। আরও কয়েক দিন এমন তাপমাত্রার সঙ্গে শীত ও কুয়াশা অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা অন্যান্য বছর দেখতাম ১৫ জানুয়ারির আগে শীত বেশি পড়ে এবং ১৫ জানুয়ারির পর থেকে শীত কমতে থাকে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। কনকনে ঠান্ডাতেও কাজের আশায় দাঁড়িয়ে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button