শাহজাদপুরসিরাজগঞ্জ

কবি সৈয়দ শুকুর মাহমুদের চিরবিদায়

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের রূপপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বিশিষ্ট কবি,সাহিত্যিক ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার জানাজার নামাজ থানারঘাট মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে চুনিয়াখালিপাড়া কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। জানাজার আগে তার বাসভবন এলাকায় শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান ও শাহজাদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ পৃথক পৃথক ভাবে ফুলের তোরা দিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস মল তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। তার মৃত্যুতে কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

তার ছেলে সাইফুল ইসলাম মাস্টার জানান, তিনি এদিন ভোর রাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর তার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে দ্রুত এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সকাল ৮টার দিকে ইন্তেকাল করেন। তার এই মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সবার সাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক, লেখক, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসি তার বিদেহী আত্নার মাগফিরাত ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। কবি ও নাট্যকার ম.জাহান বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শুকুর মাহমুদ ছিলেন, খ্যাতিমান আনোয়ারা উপন্যাসেন লেখক সাহিত্যরত্ন নজিবর রহমানের বংশ ধর। ১৯৫২ সালের ৯ নভেম্বর শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের চর বেলতৈল গ্রামের পিতা সৈয়দ মকবুল হোসেন ও মাতা সৈয়দা পরশতোলা বেগমের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। তারিদ্রতার কারণে তিনি শিশু বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে গৃহস্থালি ও গরুর রাখালির কাজ শুরু করেন। যৌবনের শুরুতে তিনি মহাজনের ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আনসার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে অবসর নিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের মান্টার রোল ও প্রকল্প তৈরীর কাজ সুনামের সাথে করেছেন। পাশাপাশি তিনি লেখালেখি শুরু করেন।  তার উপন্যাস কে দায়ী, সত্যিই তুমি নারী, দুঃসাহসী নারী, সামাজিকতার উৎসবে মুসলিম সমাজ কোথায়, এ কান্নার শেষ কোথায়, মশু রাজ্যেও বিধান সভা, ব্যঙ্গ কবিতা, ক্ষণিকের স্মৃতি, ঘুণে খাচ্ছে সভ্য সমাজ, পাতা ঝড়লের নব গাঞ মরে না। এছাড়া তিনি অসংখ্য কবিতা, ছড়া কবিতা ও গল্প লিখেছেন। তার লেখায় রাজনৈতিক অসংগতি, সামাজিক অবক্ষয় উঠে এসেছে। এছাড়া তার লেখা গল্প, উপন্যাস য়ৌথ কবিতা গ্রন্থ ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তিনি ছিলেন, একজন ভালো মানের সাহিত্য সংগঠক। তার রয়েছে তরুণ ও প্রবীণ লেখকদের সমন্বয়ে অসংখ্য গ্রন্থ প্রকাশ। এছাড়া তিনি তরুণ,নরীন ও প্রবীণদের সংগঠিত করে একাধিক সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি আমৃত্যু পর্যন্ত শাহজাদপুর সাহিত্য মেলার সভাপতি ছিলেন। তার সহযোগিতায় অনেক কবি,সাহিত্যিক ও লেখকের বিকাশ ঘটেছে। তার লেখালেখির পরিমন্ডল ছিল শাহজাদপুর ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক ও লেখকের সাথে ছিল তার গভীর সখ্যতা। সর্বদা হাস্যজ্জল ও প্রাণবন্ত এই কবির বিদায়ে সমগ্র লেখক সমাজ আজ মর্মাহত ও ব্যথিত। কিবির বিদঅয়ে তাকে শেষ বারের মত দেখতে দূর দূরান্ত থেকে আত্নয়স্বজনের পাশাপাশি অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক,লেখক ও সাংবাদিক ছুটে এসেছিলেন। তারা তার বিদেহী আত্নার মাগফিরাত কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button