সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী: সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উজেরার ১২টি থানার সবজি চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। অবিরাম বৃষ্টিপাত আর সাথে পাহাড়ি ঢলে জেলার সবজি চাষীদের সিংহভাগ চাষীরা এখন দুঃচোখে সরিষার ফুল দেখছে। অন্যদিকে সবজি বাজারে পাগলা ঘোড়া ছুটে চলায় (বেগুন ৭০ টাকা, মুখি ৮০ টাকা) সাধারণ মানুষের জীবন যেন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত যেমন সবজি চাষীদের ক্ষতি হয়েছে তেমনি সদ্য বোনা আমন ধানের চাড়া ডুবে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জ জেলার নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নিন্মাঞ্চলে আমন ধানের চাড়া ডুবে গিয়ে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারনের তথ্য মতে, এখন খরিপ/১ ২০২৩-২৪ মৌসুমের আইটেম ওয়ারী গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির মধ্যে লাল শাক, পুঁই শাক, গ্রীমা কলমা, পট শাক, সবুজ শাক, লাউ শাক, ডাটা শাক, পটল, করল্লা, উচ্ছে, বেগুন, ঢেড়শ, শশা, বটবটি, ঝিংগা, চিচিঙ্গা, কুন্দল, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, মুখি, পানি কচু, লতিরাজ কচু, ইত্যাদি সবজির আবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের অতি বৃষ্টিপাতের কারনে চাষীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তারা চাষাবাদে চরমভাবে মার খাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের পরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েক দিনের সবজি আবাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনও সংগৃহিত হয়নি। তবে গত ১৮ আগষ্ট ২০২৩ অফিস থেকে যে জরিপ করেছে তার একটি পরিসংখ্যান আমাদের প্রতিনিধিকে পেশ করেন। গ্রীষ্মকালীন সবজি ৪৫১০ হেক্টর আবাদ ৪৫১২ হেক্টর ক্ষতি ৪৮ হেক্টর। গ্রীষ্মকালী মরিচ লক্ষ্যমাত্রা ৫৯০ হেক্টর, আবাদ ৩০৬ হেক্টর, ক্ষতি ১.৪ হেক্টর। বোনা আমন ১৩৫৫০ হেক্টর, আবাদ ১৩০৬৫ হেক্টর, ক্ষতি ৩.০১ হেক্টর। আউশের লক্ষ্যমাত্রা ৭০৭০ হেক্টর, আবাদ ৬৬৪৬ হেক্টর, ক্ষতি ২৬৩৫ হেক্টর। পাটের লক্ষ্যমাত্রা ১৬৯১০ হেক্টর, আবাদ ১৭২৯৮ হেক্টর, ক্ষতি ৩১.৬০ হেক্টর। আখ চাষ ৮৪০ হেক্টর, আবাদ ৮৯০ হেক্টর, ক্ষতি ২০ হেক্টর। সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১২.৩৭ হেক্টর।
এদিকে মাঠ পর্যায়ের তথ্যমতে, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ এলাকায় চলন বিল এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপুরণীয়। ভারী বৃষ্টিপাতে তাদের সবজি ডুবে গিয়ে পঁচে গেছে। চলন বিল এলাকার সবজি চাষী বাবু মন্ডল জানায়, আমাদের নিন্মাঞ্চলে সবজি চাষীদের মাথায় বাজ পড়েছে। তাদের কোমড় সোজা করে দাড়ানো খুবই কঠিন। আর এই বৃষ্টিপাত ও বর্ষায় সবজির ক্ষয়ক্ষতির বার্তা শুনে বাজারে সবজির চলছে অগ্নি মূল্য। ফলে গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ সবজি কিনে ভাত খেতেও হিমসিম খাচ্ছে।