তাড়াশসিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫৪ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে যমুনা নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলের মানুষগুলো। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কাজিপুর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যেমন যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে, তেমনি বন্যার আতংকে দিনপার করছে নদী নিকটবর্তী এলাকার মানুষগুলো। মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান।

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকার পানিবন্দি মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে ৪০ মেট্রিক টন চাল, শিশু খাদ্যের জন্য নগদ ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ১ লক্ষ ৫হাজার নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, জেলার কাজিপুর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় (২০ জুন সকাল ৬টা থেকে ২১ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৯ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে পাউবোর পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, সকালে শহরের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৪ মিটার। এই পয়েন্টে গত ২৪ঘন্টায় ১৬ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু তিস্তায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, ফলে যমুনায় আরও কয়েক দিন পানি বাড়তে পারে। ফলে সিরাজগঞ্জে বন্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন। পানিবৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমির কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ফলে ওইসব এলাকার অনেকেই উঁচু বাধ বা নির্মানাধীন কোনো ভবনে ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ।

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সাইদুল হক জানান, দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকায় প্রায় ৩ হাজার পানিবন্দি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে ৪০ মেট্রিক টন চাল, শিশু খাদ্যের জন্য নগদ ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ১ লক্ষ ৫হাজার নগদ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button