তাড়াশসিরাজগঞ্জ

প্রতিবন্ধিতার কাছে হার মানেনি সুশান্ত উরাঁও

নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুবিধ প্রতিবন্দ্বিতা নিয়ে একটি অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয় সুশান্ত উরাঁও। সে কানে শোনেনা, কথাও বলতে পারেনা। হাত দুটো বাকা ও সরু হয়ে গেছে। দুই হাতের আঙ্গুল মাত্র ৭টি।  কিন্তু অদম্য ইচ্ছেশক্তি রয়েছে তার। সব বাঁধা পেড়িয়ে এবছর মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা দিচ্ছে সুশান্ত উরাঁও। বাবা-মার স্বপ্ন ছেলে পড়ালেখা শিখে চাকরি করবে। একদিন ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ছড়াবে। বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণে অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে প্রতিবন্দ্বিতাকে পরাজিত করে সুশান্ত উরাও এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ইচ্ছে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বাবামায়ের ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ছড়াবে।

সুশান্তর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের আদিবাসী অধ্যূষিত গুল্টা গ্রামে। তার বাবার নাম অসান্ত উরাঁও,  মা ভাগ্যবতী উরাঁও।

সুশান্তর বাবা অসান্ত উরাঁও বলেন, আমরা সহায় সম্বলহীন। নিদারুণ অভাব-অনটনে দিন কাটে। বড় মেয়ে প্রতিমা উরাঁওকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলে হৃদয় উরাঁও ৯ বছর বয়স থেকে দিন মজুরের কাজ করে। আমি  ও আমার স্ত্রী ভাগ্যবতী উরাঁও কৃষি শ্রমিকের কাজ করি। কিন্তু এলাকায় ৫ মাস দিন মজুর খাটার সুযোগ থাকে। বাকি ৭ মাস কর্মহীন থাকতে হয়। ফলে সংসারের অভাব যায়না।

সুশান্তর মা ভাগ্যবতী উরাঁও বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছেলে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে চাকরি করবে। সংসারের অভাব দূর হবে। বুড়ো বয়সে কাজ করে খেতে পারবনা। তখন প্রতিবন্ধী ছেলেই আমাদের ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ছড়াবে। সুশান্তর নিকটতম প্রতিবেশী উজ্জল কুমার উরাঁও বলেন, বিদ্যালয় ছুটি থাকলে সুশান্ত তাদের সাথে মাঠে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে। সে পাওয়ার টিলার দিয়ে হাল চাষ করতে পারে। কোদালে জমির আইল কাটতে পারে।

গুল্টা বাজার শহীদ এম মনসুর আলী কলেজের অধ্যাক্ষ আছাদুজ্জামান বলেন, সুশান্ত উরাঁও মেধাবী, অধ্যবস্যায়ী ও আত্মপ্রত্যয়ী।  সে ৪.৮৮ জিপিয়ে পেয়ে পিএসসিতে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। জেএসসিতেও ভালো ফলাফল করেছে। এসএসসি পাশ করেছে ৩.৪৭ জিপিয়ে পেয়ে। গুল্টা বাজার শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষা দিচ্ছে।

তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের কক্ষ পরিদর্শক প্রভাষক মেহেরুল ইসলাম বাদল বলেন, আচরণে সুশান্ত উরাঁও ভদ্র ও বিনয়ী। এক হাতে তিন আঙ্গুল, আরেক হাতে চার আঙ্গুল। লিখতে তার বেশ কষ্ট হয়। কিন্তু হাতের লেখা খুব সুন্দর।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষা বৃত্তি ও সাইকেল দেওয়া হয়। বহুবিধ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সুশান্ত উরাঁওকে চলাচলের জন্য ছাইকেলসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button