চৌহালীসিরাজগঞ্জ

সোনালী আঁশে স্বপ্ন দেখছেন চৌহালীর কৃষক

ইদ্রিস আলী, চৌহালী প্রতিনিধি: সোনালী আঁশ খ্যাত পাট তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছে অনেক আগেই। কালের বিবর্তনে পাটের সেই কদর এখন আর নেই। পাটের সোনালী অতীত এখন কেবলই ইতিহাস। এরপরও পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার পাটচাষিরা। যদিও গেল কয়েক বছর তেমন পাট চাষ করতে দেখা যায়নি উপজেলার বেশিরভাগ কৃষককে।

এবার উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৯২০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৮২৫ হেক্টর জমিতে। দেশি পাট ৪৫৫ হেক্টর, তোষা পাট ৩৬৫ হেক্টর, কেনাফ পাট ৭৫ হেক্টর ও মেস্তা জাতের পাট ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।

প্রতিবছর এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পাট চাষ করেন গ্রামের সাধারণ কৃষকরা। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করেন তারা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি থেকে ফসল ফলান। সবুজ পাটকে রূপান্তরিত করেন সোনালি বর্ণে। এরপরও বিক্রি করতে গিয়ে পড়েন দুর্বিপাকে। কখনো ভালো দাম পান আবার কখনো পান না। অনেক সময় আবার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি। এরপরও সামান্য লাভের আশায় প্রতি বছরই পাটের আবাদ করেন চাষীরা। পাটের দাম নিয়ে সংশয় থাকেই। তবে এবার পাটের দাম ভালো হওয়ায় কপাল খুলেছে কৃষকদের। নতুন সম্ভাবনায় এবছর কৃষকের মনে সেই ভয় কেটেছে। যেন আবারও সোনালি আঁশের সুদিন ফিরে পেয়েছেন। বর্তমানে এ বছরে বাজারে ওঠার শুরুর দিকেই ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে।

গেল কয়েক বছরের লোকসানের পর এ বছর পাটে লাভের মুখ দেখার আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেজায় খুশি। অনেকেই পাট চাষে নতুনভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ বছর।

তবে পাটের গৌরবময় অতীত হারিয়ে গেলেও নতুন করে আবার পাটের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে চৌহালীতে। কৃষি বিভাগ বলছে জেলায় গতবারের চেয়ে এবার লক্ষ্যমাত্রা ও ফলন দুটোই বেশি হয়েছে। এতে হাসি ফুটেছে চৌহালীর পাট চাষিদের মুখে। এক সময়ের সোনালি আঁশকে নিয়ে তারা নতুন করে স্বপ্ন বাঁধছে। তবে দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের আশঙ্কায় তাদের সেই স্বপ্নও মলিন যেন না হয় সেটাই প্রত্যাসা। চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলনের পর লাভের আশা করছেন চাষিরা। এরই মধ্যে উপজেলায় সোনালী আঁশ আহরণ শুরু হয়ে গেছে। সরেজমিনে উপজেলার খাষকাউলিয়া, ঘোরজান, খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে মাঠে চোখ জুড়ানো সবুজ আর সবুজ চারদিকে সবুজের সমারোহ। দক্ষিণা বাতাসে সবুজ পাতার সাথে দোল খাচ্ছে মাঠের পর মাঠ কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।

উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের খাষধলাই গ্রামের মুরুব্বি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক মেম্বর বলেন, পাট যে কবে থেকে এ দেশে চাষ হচ্ছে তা বলা কষ্ট তবে ব্রিটিশ আমল থেকেই চাষ হচ্ছে। সম্ভবত সোয়া ২ শত বছর আগে নীলকুঠিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাটের চাষ শুরু হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ১৮০০ সালের প্রথম দিকে ভারতে উড়িস্যা রাজ্য থেকে পাট চাষের সূচনা হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে কৃষি বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম পাটের জিনম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেন। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাটের বীজ বপন করা হয় আর আষাঢ় মাসে তা কেটে ৮ থেকে ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে পাটের আঁশ বেড় করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযুক্ত করা হয়।

 উপজেলার খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের পাট চাষি মো. খোরশেদ মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এ বছর ৪ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। চাষে খরচ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তবে আশা করছি পাট কেটে ঘরে তুলতে পারলে ভালো দাম পাবো।

খাষকাউলিয়া গ্রামের ইয়াসিন মোল্লা বলেন, চরে ৭ বিঘা জমিতে পাট বুনেছি আল্লাহ ভালো ভাবে কাটতে দিলে অনেক উপকার হইবো। পাটের দাম এ বার ভালো আছে লেবার সহ সব খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকবো। সরকার যদি পাটের দাম এ রকম রাখলে পাট আরো বেশি করে আবাদ করবো।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাজেদুর রহমান বলেন, পাট থেকে উৎপাদিত পণ্য যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি উৎপাদন কালিন সময়ে প্রতি হেক্টর জমি থেকে প্রায় ১০ মে.টন অক্সিজেন প্রকৃতিকে দিয়ে থাকে।

 তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব পাটের মোড়কসহ বিভিন্ন কাজে পাট জাতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ালে পাটের চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি লাভবান হবেন চাষিরা। তবে কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায়, সে ব্যাপারে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করি, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত স্বপ্নের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button