তাড়াশ প্রতিনিধিঃ চারিদিক শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রকৃতি যেন হলুদ আভায় সেজে বসেছে। পাশাপাশি মৌ মৌ সুভাসে আর গুণগুণ শব্দে মূখোর হয়ে উঠেছে দিগন্ত জুড়ে। এমনই দৃশ্য এখন চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাঠ-ঘাটে। পুরো এলাকার ফসলের মাঠ জুড়ে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। চারদিকে সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহ। যেদিকে তাকাই মনে হয় যেন হলুদ চাঁদরে ঢেকে আছে ফসলের মাঠ। আর এরই সাথে সাথে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌ-চাষিরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলে ফুলে। আর ফসলী মাঠে সরিষার জমিতে হলুদ ফুল ফোটার সাথে সাথে মৌচাষীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে। এ বছর রবি শস্য সরিষার পর্যাপ্ত চাষ হওয়ায় মধু আহোরণও ভালো হবে বলে জানিয়েছেন মৌচাষিরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানিয়েছেন, চলতি রবি মৌসুমে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। আর এ সমস্ত সরিষা জমির পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৌচাষিরা হাজার হাজার মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার পরাগায়নে ফলন বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভ জনক ব্যবসা।এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।
মৌচাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় মৌমাছি ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর থাকে একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের ফ্রেমে জমা করে। আর এই ফ্রেম বা চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষীরা। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে রায়হান আলী নামের মৌচাষী জানান, মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এক প্রকার বিশেষ বাক্স। ওই বাক্সের ভেতরে মোম দিয়ে বানানো একটি সিড লাগানো হয়। তারপরেই বাক্সের মধ্যেই রাখা হয় রাণী মৌমাছি। রাণীর আকর্ষণে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা। সরিষার ক্ষেতের পাশে ১৩০ টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন তারা। বিস্তৃর্ণ সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স বসানো হয়। এসব বাক্স থেকে ২ সপ্তাহে গড়ে প্রায় ২ থেকে আড়াই মণের মতো মধু পাওয়া যায়। এই মধু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি মধু ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ মৌসুমে ২ থেকে আড়াই মে.টন সরিষা ফুলের মধূ সংগ্রহ করতে পারবেন বলে তিনি জানান। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের মৌসুম। উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষ বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগগ্র করে থাকেন মৌয়ালরা। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা চাষিদের ও মৌচাষিদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে তারা সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হন।