রাজনীতি

হলে থাকতে চাইলে ছাত্রলীগই শেষ কথা

পাঁচ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই বলে হলে শিক্ষার্থীরা থাকছেন না, বিষয়টি এমন নয়। হলে ওঠার ‘বরাদ্দপত্র’ নিতে হয় ছাত্রলীগের কাছ থেকে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে জায়গা পেতে হলে ছাত্রলীগের কাছে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

আবাসিক হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগও নেই। নতুন করেও আসন বরাদ্দের কোনো বিজ্ঞপ্তিও দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। গত জুন মাসের শেষ দিকে সব হলের প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঈদের পর হলে বৈধভাবে ওঠার জন্য বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করা হবে।

এই ঘোষণার বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের ‘চাপ’ শেষ পর্যন্ত উপেক্ষা করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিটি হলে আসন বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু করলে ছাত্রলীগ সাহায্য করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি আবাসিক হল রয়েছে। তবে নতুন নির্মিত দুটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হলে এখন পর্যন্ত কাউকে ওঠানো হয়নি। বাকি ১১টির মধ্যে ছাত্রদের জন্য রয়েছে সাতটি ও ছাত্রীদের জন্য চারটি হল। এসব হলে মোট আসন ৪ হাজার ২৮০টি। ছাত্রদের সাতটি হলে আসন ২ হাজার ৭৩০টি। নিয়ম মেনে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে আর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রতিবছর ৪ হাজার ৯২৬ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এর মধ্যে ছাত্র গড়ে ৬০ শতাংশ। বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ২৭ হাজার ৫৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৭ হাজার ৪৯৪ জন।

হলের নিয়ন্ত্রণ কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নেই তা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ কাজী খসরুল আলম কুদ্দুসী প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু সব হলে একসঙ্গে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাই চাইলেও কোনো হল কর্তৃপক্ষ একা কিছু করতে পারে না। আগে প্রাধ্যক্ষ কমিটি ছিল। এটি না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সুলতান আহমেদ। তিনি দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রাধ্যক্ষরা ভোট দিয়ে সিন্ডিকেটে তাঁদের একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। মূলত তিনিই প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহ্বায়ক হন। কিন্তু বি সুলতান আহমদের পর আর কোনো প্রাধ্যক্ষ সিন্ডিকেটের সদস্য হননি। তাই হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বৈধভাবে আসন বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শহীদ আবদুর রব হলের প্রাধ্যক্ষ রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিটি হলে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। ঈদের পর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসন বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button