ইসমাইল হোসেন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছর জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে দেশের প্রবীণ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন? বিষয়টি নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকে জেলার হাট বাজার, চায়ের দোকান, সুশিল সমাজে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ৬৩,সিরাজগঞ্জ-২ ( সিরাজগঞ্জ সদর-কামারখন্দ) আসনের মনোনয়ন নিয়ে নিত্য আলোচনা। বাতাসে জোর গুঞ্জন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদর আসন আবার ফিরে আসছে মুজিব সড়কের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বাড়ি প্রয়াত জননেতা মোতাহার হোসেন তালুকাদারের ঘরে।
সিরাজগঞ্জ সদর আসনের মনোনয়ন পত্র তুলেছিলেন ১০ প্রার্থী। এরমধ্যে বর্তমান এমপি অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, জেলা সভাপতি অ্যাড. কে.এম. হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, সহসভাপতি, পিপি আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা হেনরী ও শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর দৌহিত্র ড. সেলিম পুত্র শেহেরিন সেলিম রিপন উল্লেখযোগ্য।
গত ২৩ নভেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ্আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্তকরনের কাজ শেষ হয়। এসময় দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের ইঙ্গিত দেন, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকে এবার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য কয়জন বাদ পড়েছেন, এ মুহুর্তে আমি বলতে পারছি না, তবে বাদ পড়েছেন। তিনি জানান, দুদিন অপেক্ষা করুন। চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে।
একটি সূত্র বলছে, রোববার সকাল ১০টায় গণভবনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন দলটির সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। জানা যায়, রোববার চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
জেলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু জেলা সদর। সেহিসেবে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি এ নিয়ে উৎসুক জনতার আলোচনায় গতি পায়। শহর জুড়ে তুমুল আলোচনা বর্তমান এমপি কি পাবেন আগামীর মনোনয়ন? আলোচনায় রয়েছে বর্ষিয়ান নেতা জেলা সভাপতি অ্যাড. কে এম হোসেন আলী হাসান, ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, আব্দুস সামাদ তালুকদার ও শেহেরিন সেলিম রিপন এর নাম।
সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগর প্রতিষ্ঠিত হয় ৪৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। দলের সভাপতির দায়িত্ব পান আমির হোসেন উকিল, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর মোক্তার। প্রতিষ্ঠা কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান সে সময়ের যুবক মোতাহার হোসেন তালুকদার। ৪৯ সাল থেকে ২০০১ সালে তার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ৫০ বছরে তিনি ছিলেন মহুকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি।
প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দলের বিপদে-দুর্দিনে আওয়ামী লীগের ছিলেন কান্ডারী। তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার মনোনয়ন পান। ৭০ সালে তিনি জেল থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ৭৫ সালের মধ্য আগষ্টে মর্মান্তিক ও পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর দলের দুর্দিনে ৭৯ সালে এবং পরে ৮৬ ও ৯১ সালে তিনি নৌকার মাঝি হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন। বাতাসে জোর গুঞ্জন দীর্ঘ ৩২ বছর পর জননেতা মোতাহার হোসেন তালুকদার এর প্রয়াণের ২২ বছর পর আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন আবারও ফিরে আসছে তার মুজিব সড়কের ঘরে। এবারে নির্বাচনে তার কনিষ্ঠ পুত্র শামীম তালুকদার এর সহধর্মিনী নারী নেত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আর হেনরী তালুকদারই পাচ্ছেন সদর আসনে দলের মনোনয়ন। বাতাসের গুঞ্জন কতটুকু বাস্তবে রূপ পাচ্ছে তা জানা যাবে আগামীকাল দিনের কোন এক সময়ে কেন্দ্রীয় ঘোষণায়।