দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. জান্নাত আরা হেনরী। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টি, ওয়াকার্স পার্টি, জাকের পার্টি ও তৃণমূল বিএনপির মোট ৫ প্রার্থী।
গত ১৮ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়ার কথা। গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় জেলা সদরের শহরের সর্বত্র সাদাকালো পোষ্টারে ছেয়ে গেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর। সকাল দুপুর মাইকে চলছে গান ও নৌকা প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রচারণা। নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। সদর আসনের বর্তমান এমপি অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না নৌকা প্রতীকের জান্নাত আরা হেনরীর পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যায়।
নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন ০৯ জন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এআসনে মনোনয়ন প্রদান করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. জান্নাত আরা হেনরীকে। এআসনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, ওয়াকার্স পার্টি ও তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থীগন।
গত ২৮ নভেম্বর জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নিকট দলীয় মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জান্নাত আরা হেনরী ও অন্যান্য প্রার্থীরা। ৩ ও ৪ ডিসেম্বর সদর আসনসহ জেলার ৬ নির্বাচনী আসনের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষ হয়। পরে গত ১৮ ডিসেম্বর বৈধ প্রার্থীদের হাতে প্রতীক তুলে দেন জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমান। সদর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জান্নাত আর হেনরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির আমিনুল ইসলাম ঝন্টু ( লাঙ্গল), ওয়াকার্স পার্টির সাদাকাত হোসেন বাবুল ( হাতুড়ি), জাকের পার্টির আব্দুর রুবেল সরকার ( গোলাপ ফুল), তৃণমুল বিএনপির সোহেল রানা ( সোনালী আঁশ)এর হাতে তাদেও প্রতীক তুলে দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা।
প্রতীক প্রাপ্তীর পর আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। প্রচারণায় জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেল্ াআওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জান্নাত আরা হেনরীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়। এছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও নৌকা প্রার্থীর প্রচারণা পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা সদরের সড়ক, অলি গলি ও নির্বাচনী এলাকার গ্রাম, ইউনিয়ন পর্যায়ে পোষ্টার, মাইক ও গণসংযোগ চলছে। মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী মিছিলের শ্লোগান।
এদিকে সদরের অন্য প্রার্থীদের অনেকটাই ধীর লয়ে প্রচারণা পরিচালনা লক্ষ্য করা যায়। গতকাল জাতীয় পার্টিও পক্ষ থেকে নির্বাচনী গণসংযোগ এর মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। এসময় লাঙ্গল প্রতীক এর লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থী চৌরাস্তা মোড় এলাকায় নির্বাচন পরিচালনায় দফতর খোলা হলেও এখন পর্যন্ত শহরে কোন প্রচারণা দৃশ্যমান হয়নি।
উল্লেখ্য, ড. জান্নাত আর হেনরী সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক, পরে মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি জননেতা প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদার এর কনিষ্ঠ পুত্র শামীম তালুকদার এর সহধর্মিনী। পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা। জীবিতদ্দশায় ছিলেন একজন সফল শিক্ষক।
জান্নাত আরী হেনরীর পেশাগত জীবনের শুরু সংগীত শিক্ষক। রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হেনরী বর্তমানে সাংস্কৃতিক সংগঠক ও একজন সফল ব্যবসায়ী। গত ২০০৮ সালে তিনি ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনে বিএনপি প্রার্থী রুমানা আহমেদ এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন। ওই নির্বাচনে তিনি অল্পভোট পরাজিত হন। পরে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন।
একজন সফল ব্যবসায়ী জান্নাত আর হেনরী রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধ্রাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। সম্মেলনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের বর্তমান অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও পৌর মেয়রসহ ৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডিঙ্গিয়ে তিনি সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পান।