চৌহালী প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নামে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে ও গোপন কার্যবিবরনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এর তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: রায়হান কবির। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাকে চৌহালী উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাত এর অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) তদন্ত কাজে তিনি চৌহালীতে গিয়েছিলেন। কাগজ পত্র দেখেছেন। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথাও বলেছেন। যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
উল্লেখ্য, চৌহালীতে নামে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে ও গোপন কার্যবিবরনীর মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের সাড়ে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক সরকার এবং বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে গত ১৩ আগষ্ট চৌহালী উপজেলার খাষকাউলিয়া পশ্চিম জোতপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে বেল্লাল হোসেন জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তিনি।
এরই প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), মো: রায়হান কবিরকে তদন্তের দায়িত্ব দেন জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। মঙ্গলবার থেকে তিনি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ চৌহালী উপজেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্প গুলোর অস্তিত্ব নেই এমন নাম স্বর্বস প্রকল্প দেখানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও কার্যালয় সুসজ্জিত করণের নামে ২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প কমিটির সভাপতির করা হয় স্থল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিম মিয়া। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে এ নামে কোন ইউপি সদস্য নেই স্থল ইউনিয়নে। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্প গুলো হচ্ছে, উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এসি ও চেয়ার সরবরাহ, উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে পর্দা ও টেবিল সরবরাহ, উপজেলা শিক্ষা সমিতির ভবন মেরামত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য কম্পিউটার সেট ক্রয়, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ার পর্দা ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী সরবরাহ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন মেরামত ও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সামগ্রিক ক্রয় নামের ৮ টি প্রকল্পের নাম রয়েছে। এর অনুকুলে রাজস্ব খাতে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের কমিটিতে বিভিন্ন ইউপি সদস্যদের নাম দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অবগত নয় স্থল ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছালমা জাহান, খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন। তারা জানান প্রকল্পের কথা বলে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি চেক নিয়েছে। তার পর আর সেই প্রকল্পের সম্বন্ধে কিছুই জানানো হয়নি। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সুসজ্জিত করণ প্রকল্পের সভাপতি স্থল ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া। এবিষয়ে স্থল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান স্থল ইউনিয়নে সেলিম মিয়া নামে কোন ইউপি সদস্য নেই। এছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এখন পযন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হয়নি। তারপরও সংস্কার কাজ দেখিয়ে দেড় লাখ টাকার প্রকল্প দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সুসজ্জিত করণে ২লাখ টাকা ব্যায় দেখানো হলেও ছবি ঝুলানোর বোর্ড ছাড়া কোন কাজই করা হয়নি। উপজেলা সভা কক্ষে এসি লাগাতে ২লাখ টাকা ব্যায় দেখানো হলেও এখনো কোন এসি লাগেনি। উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার পরিছন্ন সামগ্রী সরবরাহ বাবদ ২ লাখ ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার সেট ক্রয় বাবদ ২ লাখ টাকার প্রকল্প দেয়া হলেও সেটার সঠিক ব্যবহার হয়নি। নিয়মানুযায়ী (২০২২-২৩ অর্থ বছরে) প্রকল্পের কাজ শেষ করে টাকা উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তলন করা হয়েছে।