এনডিপি প্রতিনিধি : এনডিপি “সমন্বিত কৃষি ইউনিট (কৃষি খাত)”এর আওতায় ফুলকোচা শাখায় মৌসুম ভিক্তিক উচ্চ ফলনশীল নতুন ধানের জাত চাষ ও ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের উপর দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত।
গত ২৪ মে ও ২৫ মে এনডিপি ফুলকোচা শাখায় উচ্চ ফলনশীল নতুন ধানের জাত চাষ ও ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের উপর দুই দিনব্যাপী কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা(কৃষি) মহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার সাদাত, কৃষি উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম (সমন্বিত কৃষি ইউনিটের সফল কৃষক) এবং ইউনিটের কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রশিক্ষণে জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন কৃষিই সমৃদ্ধি, কাজেই কৃষির উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেজন্য কোন জমি অনাবাদি রাখার সুযোগ নেই। শাক সবজি সহ বিভিন্ন শস্যের ভাল মূল্য পাওয়ার জন্য অবশ্যই আগাম এবং নাবি জাতের উচ্চ মূল্যের শস্য চাষ করতে হবে। জমিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রাসায়নিক সার এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। শাক সবজি চাষের জন্য জৈব/ট্রাইকো সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে পোকা মাকড়ের আক্রমন বেশি হয়। যার কারনে ফসল চাষে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে য়ায়। জৈব পদার্থ হচ্ছে মাটির প্রাণ, মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ থাকার কথা শতকরা ৫ ভাগ। কিন্ত বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান হল ১-১.৫ ভাগ। উক্ত ইন্ডিকেটর ভয়াবহ। কাজেই মাটির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য কেচো এবং ট্রাইকো কম্পোস্ট সার নিজে তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শস্যের উৎপাদন বাড়াতে হলে অবশ্যই বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উ™া¢বিত উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত ব্যবহার করতে হবে। দিন দিন আমাদের দেশের আবাদি জমি হৃাসের কারণে নিয়মতান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে আধুনিক এবং স্বল্প মেয়াদি বিভিন্ন ফসলের জাতের চাষাবাদ করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে ভোজ্য তেলের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। কিন্ত দেশের কৃষকেরা তাদের জমিতে ইচ্ছে করলে স্বল্প মেয়াদি ধানের জাত ব্রিধান ৭১, ৭৫, বিনাধান ৭ এবং ১৭ আবাদ করে অনায়াসে পরবর্তি ফসল বারি সরিষা ১৪ অথবা ১৭ চাষ করতে পারে। এর ফলে ভোজ্য তেলের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব।
প্রশিক্ষণে কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন বাংলাদেশের কৃষকেরা ধান গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত ২০-২৫ বছর পূর্বের অবমুক্ত জাত এখনো ব্যবহার করেন। যে জাতগুলি বর্তমান আবহাওয়ায় মোটেই উপযোগী নয়। সেকারনে আধুনিক কৃষির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য মৌসুমভেদে উচ্চ ফলনশীল নতুন ধানের জাত চাষ করতে হবে। ২০২৩-২৪ সালের বোরো মৌসুমে ব্রিধান ২৮ এবং ব্রিধান ২৯ চাষ করা একদম নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষের জিংক এবং আয়রণের ঘাটতি পূরণের জন্য ৫টি জাত রয়েছে। মৌসুমভেদে জাতগুলি হলো ব্রিধান ৬২, ব্রিধান ৬৪, ব্রিধান ৭২ এবং ব্রিধান ৭৪ ( জিংক সমৃদ্ব)। জিংক এবং আয়রণ সমৃদ্ব একমাত্র জাতটি হলো ব্রিধান ৮৪। ধানের উক্ত জাতগুলি বর্তমান সময়ে আলোচিত এবং চাষ উপযোগী। দেশের মানুষের জিংক এবং আয়রণের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন অত্র ইউনিটের কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ আবদুল হালিম। সফল কৃষক শহিদুল ইসলাম কৃষি খাতের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেছেন। দেশে রাসায়নিক সারের মূল্য ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির ফলে কৃষক এখন জৈব/ ট্রাইকো সার তৈরি এবং ব্যবহারের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন। এই কারনে বিভিন্ন খামারে জৈব/ট্রাইকো সার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শহিদুল একজন উদ্যোমী কৃষক। তিনি ট্রাইকো সার নিজের জমিতে ব্যবহার করবেন এবং অতিরিক্ত সার বাজারজাত করবেন। এনডিপি তার সফলতা কামনা করছে। প্রশিক্ষণ সমাপনীতে কৃষকদেরকে মাঝে কলমি শাকের বীজ বিতরণ করা হয়।
প্রশিক্ষণে পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ কৃষকের জন্য নতুন ধানের জাত, কম্পোষ্ট সার ও বাজারজাতকরণের প্রশিক্ষণ আয়োজন করায় এনডিপিকে ধন্যবাদ জানান।